বাড়ি নির্মাণকাজের ঠিকাদারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় সাইদা গাফফারের নির্মাণাধীন বাড়ি। গাজীপুর মহানগরের পানিশাইল এলাকায় শনিবার
ছবি: মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার (৭১) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তাঁর বাড়ির নির্মাণকাজের ঠিকাদার আনারুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।

আজ শনিবার সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আসামিকে গাজীপুরের আদালতে পাঠিয়েছেন। আনারুল ইসলাম (২৫) গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বুজুর্গ গ্রামের আনসার আলীর ছেলে।

সাইদা গাফ্ফার গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরের পানিশাইলের যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আজ সকালে সেই বাড়ির সামনে কথা হয় তাঁর ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর মা এই বাসায় থেকে পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হাউজিং প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণকাজ দেখাশোনা করতেন। বাড়ির কাজও প্রায় শেষের দিকে। ৩০ জানুয়ারি নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল তাঁদের।

অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার
ছবি: সংগৃহীত

কাশিমপুর থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ মিজানুর রহমান জানান, ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজিতলা এলাকার মৃত কিবরিয়া উল খালেকের স্ত্রী সাইদা গাফ্ফার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি গাজীপুর মহানগরের পানিশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। নির্মাণকাজ দেখাশোনার জন্য আবাসন এলাকার পাশেই একটি ভবনে ভাড়া থাকতেন তিনি।

সাউদ ইফখার বিন জহির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন এলাকাটি অরক্ষিত। নামে মাত্র নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা রয়েছে। সন্ধ্যার পর নিরাপত্তাকর্মীদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, তাঁর মা নতুন বাসার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি গাছ কেটেছিলেন। গাছটি সীমানা প্রাচীরের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় এটি কাটতে হয়েছিল। আনারুল ইসলাম গাছটি কেটেছিলেন। তাঁকেই পুলিশ সন্দেহ করে গতকাল শুক্রবার ভোরে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে। আনারুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাঁর মায়ের ভাড়া বাসার একটু দূরের একটি ঝোপ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) জাকির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আনারুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, টাকাপয়সার জন্যই সাইদা গাফ্ফারকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আজ সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে কাশিমপুরের পানিশাইল পলাশ হাউজিংয়ের একটি জঙ্গল থেকে সাইদা গাফ্ফারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ১১ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ১১ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মেয়ে সাদিয়া আফরিন মায়ের মেসেঞ্জারে মেসেজ দেন। কিন্তু মেসেজ সিন না হওয়ায় ১২ জানুয়ারি সকালে ফোন দিলে ফোন ধরেননি তাঁর মা। ওই দিনই আনারুল ইসলাম নিহত অধ্যাপকের স্বজনদের ফোন দিয়ে জানান যে তাঁকে (সাইদা গাফ্ফার) পাওয়া যাচ্ছে না, ফোনও বন্ধ। নিহত অধ্যাপকের ভাই নজরুল নামের এক শ্রমিককে বাসায় পাঠালে তিনি গিয়ে দেখেন, বাসার গেট খোলা, আলমারিতে চাবি ঝুলছে। সাইদা গাফফারকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে না পেয়ে মেয়ে সাদিয়া আফরিন ১২ জানুয়ারি রাত সোয়া নয়টার দিকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৩ জানুয়ারি রাতে আনারুল ইসলামকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি সকাল সোয়া ১০টার দিকে দক্ষিণ পানিশাইলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পে ভেতরে চলাচলের রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে সাইদা গাফ্ফারের মরদেহ উদ্ধার করে।