বাড়িতে ৬৬ ভাস্কর্য বানিয়ে দিনমজুর সাহেব আলীর অনন্য দেশপ্রেম

নিজের বাড়িতে বানানো ভাস্কর্যের সামনে পটুয়াখালীর সাহেব আলী
ছবি : প্রথম আলো

বাড়ির নাম ‘ভাস্কর্য ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র’। সেখানে আছে ৬৬টি ছোট-বড় ভাস্কর্য। সেসব ভাস্কর্যে উঠে এসেছে মহান ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কথা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড় আউলিয়াপুর গ্রামে বাড়িটির অবস্থান। আর ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করেছেন গ্রামের এক দিনমজুর মো. সাহেব আলী (৫৬)।

এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করতে গিয়ে নিজের এক বিঘা জমির অর্ধেকটাই বিক্রি করে দিয়েছেন সাহেব আলী। এই টাকা ও সরকারি আর্থিক সহায়তায় ৬৬টি ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষ করতে পেরেছেন। তাঁর পরিকল্পনা আছে ৭১টি ভাস্কর্য নির্মাণ করার।

সাহেব আলী বলেন, তাঁর আট বছর বয়সে বাবা মারা যান। এরপর কোনো রকমে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১৪ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে চলে যান মুন্সিগঞ্জে। ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত কখনো চালকলে আবার কখনো নির্মাণশ্রমিকের কাজ করে জীবন চালাতেন তিনি। মুন্সিগঞ্জে চালকলে কাজ করার সময় এক বীরঙ্গনা নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ওই নারীও চালকলের শ্রমিক ছিলেন। প্রথমবারের মতো তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা–নিষ্ঠুরতার কথা জানতে পারেন। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হন তিনি।

সাহেব আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০০৬ সালে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে যান। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ শুরু করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট বসতবাড়ির খোলা জায়গায় শুরু করেন ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ। ’৫২–এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ, ‘৭৫–এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, মাওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নির্যাতনের ঘটনা তিনি এসব ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।

সাহেব আলীর বাড়িতে একটি ব্যানার টাঙানো আছে। সেখানে লেখা, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ভাস্কর্য ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র। সাহেব আলীর তৈরি এসব ভাস্কর্য দেখার জন্য প্রতিদিন অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর যায়। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত ও উজ্জীবিত করার জন্যই তাঁর ওই ক্ষুদ্র প্রয়াস। জানালেন, জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ থেকে ইতিমধ্যে দুই লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন তিনি। জায়গা বিক্রির টাকা ও অনুদান দিয়ে এ পর্যন্ত ৬৬টি ভাস্কর্য নির্মাণ করতে পেরেছেন তিনি। আরেকটু সহায়তা পেলে স্বপ্নের ৭১টি ভাস্কর্য নির্মাণ শেষ করতে পারবেন তিনি।