বিএডিসির সেচ পাম্প অচল,কৃষকের ধান চাষ ব্যাহত

ঝিনাইদহ জেলার মানচিত্র

যান্ত্রিক ত্রুটি, নদে পানি না থাকা ও ব্যবস্থাপকের ‘খামখেয়ালিপনার’ কারণে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের মাঠে থাকা বিএডিসির সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে গভীর নলকূপটি স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা তিনটি মৌসুম চলার পর বন্ধ হয়ে গেছে।

কৃষকেরা বলছেন, নলকূপ ব্যবস্থাপনা কমিটির ব্যবস্থাপক মো. ডিটল চৌধুরীর খামখেয়ালিপনার কারণে তাঁরা ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ব্যবস্থাপক কৃষকের জমিতে প্রয়োজনের সময় পানি দেন না, যখন পাম্প চালানোর প্রয়োজন, তখন কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখেন। অবশ্য ডিটল চৌধুরীর দাবি, মূলত ফুট ভালভের সমস্যা থাকায় ও যে স্থান থেকে পানি নেওয়ার কথা, সেখানে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকায় পাম্প চালাতে পারেন না। যে কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সুন্দরপুর গ্রামের মাঠে কপোতাক্ষ নদের ধারে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নদের ধারে একটি পাম্প স্থাপন করে। যে পাম্পটি নদ থেকে পানি উঠিয়ে মাঠে সরবরাহ করবে। সেই লক্ষ্যে তাঁদের গ্রামের ছানার উদ্দিনের মালিকানাধীন ৮ শতক জমিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাম্প স্থাপন করা হয়।

বর্তমানে নড়াইল জেলায় কর্মরত বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানান, তিনি মহেশপুরে কর্মরত থাকার সময় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন। এই পাম্প দিয়ে ৪৫০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেন নলকূপটি বন্ধ আছে, তা তিনি বলতে পারেন না।

সুন্দরপুর গ্রামের এক কৃষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, গভীর নলকূপটি পরিচালনার জন্য একজন ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিয়োগ দেওয়া হয়। ডিটল চৌধুরী নামের ওই ব্যবস্থাপক কৃষকের খেতে পানি দিতেন নিজের ইচ্ছেমতো। প্রয়োজনের সময় কৃষক খেতে পানি পান না। যে কারণে কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

একই গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী বলেন, তাঁর ওই পাম্প এলাকায় তিন বিঘা জমি রয়েছে। যেখানে ধানের চাষ করতেন। এ বছর পানি না পেয়ে এক বিঘায় আখ করেছেন। অন্য দুই বিঘা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে ধান চাষ করছেন। তিনি বলেন, নলকূপটি যে স্থানে বসানো হয়েছে, সেখান থেকে খেতে পানি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পাইপলাইন করা হয়নি।

ব্যবস্থাপক ডিটল চৌধুরী দাবি করেন, পানি ওঠানোর জন্য নলকূপের যে ফুট ভালভ প্রয়োজন, তা দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। মেরামতের জন্য তিনি যশোর বিএডিসি কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়েছেন। কিন্তু তারা সেটা মেরামত করে দিতে পারেনি। এ ছাড়া যে স্থান থেকে পাইপের সাহায্যে পানি ওঠানো হয়, সেখানে বছরের সব সময় পানি থাকে না।

বিএডিসির ঝিনাইদহ কার্যালয়ের বর্তমান সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ্জালাল জানান, পাম্পটি বন্ধ রয়েছে, এটা তাঁরা অবগত আছেন। তাঁরা দ্রুতই এটি আবার চালুর ব্যবস্থা করবেন।

আর খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ চলছে বলে জানান।