বিএনপি থেকে বগুড়ার সিপার বহিষ্কার

সিপার আল বখতিয়ার

বগুড়া জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ও শহর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিপার আল বখতিয়ারকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২২ সেপ্টেম্বর জেলা-উপজেলা, শহর ও পৌর কমিটি ছাড়াও সব অঙ্গসংগঠনের সভাপতি–সম্পাদকদের নিয়ে প্রতিনিধিসভা চলছিল। এ সময় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সিপার আল বখতিয়ারের নির্দেশে তাঁর ছোট ভাই আহমেদ বিন বিল্লাহ ও গ্যারেজ ব্যবস্থাপক জালালের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এতে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয় এবং নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিপার আল বখতিয়ারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাঁকে বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর আগেও আহ্বায়ক কমিটি সিপার আল বখতিয়ারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে।

দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চারবার নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার গত বছর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই কার্যত দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

সিপারপন্থী নেতা–কর্মীরা বলেন, গত বছরের ২৫ এপ্রিল নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে বগুড়া জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং তাঁর আস্থাভাজন বগুড়া বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর পরিমল চন্দ্র দাস এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের তৎকালীন সভাপতি শাহ মেহেদী হাসানের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। এ ঘটনার জেরে ২৬ এপ্রিল ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

১৫ মে গোলাম মো. সিরাজকে আহ্বায়ক করে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে দুই ডজন তালা ঝুলিয়ে দেন। ১৬ মে বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং তিনজন পৌর কাউন্সিলরসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪ নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ওই সময়ে জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার সৌদি আরবে ছিলেন। তিনি দেশে ফিরলে ২৩ মে কর্তব্যের অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে বগুড়া জেলা যুবদলের কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিপার আল বখতিয়ার বলেন, ‘গত বছর থেকে দল থেকে ত্যাগী নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১৪ নেতা–কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। কোনো কারণ ছাড়াই যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। আসছে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়াতেই আমাকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। করোনাকালে দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও গত জুন মাসে আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়। তাতেও কেন্দ্র থেকে সাড়া না পেয়ে ২২ সেপ্টেম্বর দলীয় কার্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য আমার ওপর দোষ চাপানো হয়েছে। অথচ গণমাধ্যমে এসেছে, হামলা হয়েছে দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও অগঠনতান্ত্রিকভাবে শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে দুজনের পদ রদবদলকে কেন্দ্র করে ওই হট্টগোল হয়েছে। সেখানে আমার ভাই শহর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ বিন বিল্লাহ উপস্থিতই ছিলেন না।’

গঠনতন্ত্র মোতাবেক কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর কথা। কিন্তু সেটা না করে আমার কাছে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সিপার আল বখতিয়ার

সিপার আল বখতিয়ার আরও অভিযোগ করেন, বগুড়া জেলা বিএনপির কতিপয় নেতা এখন সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বগুড়া বিএনপিতে ‘মাইনাস মিশন’–এর ষড়যন্ত্রে মেতেছেন।

সিপারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক বহিষ্কার করা না হয়ে থাকলে ওই বহিষ্কৃত নেতা মামলা করুক, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করুক।