বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘোষণা

মাদারীপুরের কালকিনি পৌর নির্বাচনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেন বিএনপির প্রার্থী মো. কামাল হোসেন ব্যাপারী। কামালের নিজ বাড়ি, পৌরসভার শিকারমঙ্গল এলাকা, ২১ মার্চ দুপুর
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩১ মার্চ। নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগেই ভোট বর্জন ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন বিএনপির প্রার্থী মো. কামাল হোসেন ব্যাপারী।

রোববার দুপুরে পৌরসভার শিকারমঙ্গল এলাকায় প্রার্থীর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কামাল হোসেন ব্যাপারী এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। আমি সেই ধারাবাহিকতায় আমার নেতা–কর্মীদের নিয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন হাটবাজার ও প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার–প্রচারণা ও গণসংযোগ করি। মিছিল–মিটিং, উঠান বৈঠকসহ আমার প্রচারণা ছিল সর্বক্ষেত্রে। আমার দল ও দলের নেতা–কর্মীদের সমর্থন ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ধানের শীষ, তথা গণতন্ত্রের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম হানিফ তাঁর পরাজয় জেনে বিভিন্ন কুটকৌশলে লিপ্ত হয়। হুমকি–ধমকির মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চয় করে। কিন্তু তাতে আমাদের বিজয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না জেনেই আওয়ামী লীগ তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করায়। তবু আমি আমার প্রচারণা ও নির্বাচন থেকে পিছপা হইনি। প্রায় এক মাসের অধিক সময় নির্বাচন স্থগিত রাখার পর পুনরায় ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিণ করা হয়, যা উদ্দেশ্যমূলক।’

বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, পৌরবাসীর নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমি নির্বাচনে ভোট বর্জন ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলাম।’

বিএনপির এই প্রার্থী আরও বলেন, বাংলাদেশে ভোটের নামে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করা হচ্ছে। তার ফলে সদ্য শেষ হওয়া মাদারীপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে ইভিএমে কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেওয়া হয়। এ ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে বিএনপির আর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এটা দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কালকিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক ব্যাপারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন মুনশি, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম প্রমুখ।

এদিকে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলে জানালেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম হানিফ। তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী কামাল হোসেন তো মাঠেই নেই। তিনি কী নির্বাচন করবেন। তাঁর অভিযোগ যত মনগড়া। বাইরে কিছু পোস্টার ছাড়া তাঁর অস্তিত্ব আমাদের চোখে পড়েনি। তিনি নির্বাচন করলে জামানত হারাবেন। তাই আগেভাগেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন।’

জানতে চাইলে কালকিনি পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী রহস্যজনক কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা শুনেছি। তবে তিনি যে অভিযোগ করছেন, তা তিনিই জানেন। আজ অবধি বিএনপির প্রার্থী ইভিএম বা যেকোনো বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেননি। আমরা নির্বাচনী মাঠে তাঁর তেমন প্রচারণাও দেখিনি। এ ছাড়া বিএনপি প্রার্থী যে সময় নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা–ও তিনি করতে পারেন না। অফিশিয়ালি সেই সুযোগও এখন নেই।’

কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম হানিফ, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান, বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা। এই তিন প্রার্থীকে ঘিরেই নির্বাচনী এলাকায় চলছে ব্যাপক প্রচার–প্রচারণা।