বিএনপি–জামায়াত ঘরানার ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা আ.লীগের কমিটি

বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ব্যক্তি ও সরকারি চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৭১ সদস্যের সেই কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে শনিবার।

উপজেলার ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেটের মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নবীন-প্রবীণদের প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াত-বিএনপি ঘরানার কয়েকজনসহ সরকারি চাকরিজীবীদের কমটিতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর আগে ১৪ নভেম্বর সাত বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে ভোটাভুটি ছাড়াই সভাপতি পদে সাংসদ এনামুল হক, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে সিরাজ উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বিএনপি ঘরানার ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।

বিগত জোট সরকারের আমলে বিএনপির উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিকেও আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, জোট সরকারের আমলে উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদে থাকা রফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেছেন। বিএনপিপন্থী মাজেদুর রহমানকে করা হয়েছে আইনবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর ছোট ভাই ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এলাকায় তিনি বিএনপির লোক হিসেবে পরিচিত।

তবে ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সহসভাপতির পদ পেয়েছেন। একইভাবে জামায়াত ঘরানার লোক হিসেবে পরিচিত হাফিজুর রহমানকে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। পদ পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে দলীয় কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি বিএনপির কমিটিতে ছিলেন কি না, তা মনে পড়ছে না। তবে ছাত্র থাকাকালীন ছাত্রলীগ করেছেন এবং জীবনের শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।

এদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন কমিটির পদে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম বেগমকে সহসভাপতি, জাহানারা বেগমকে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও হাবিবুর রহমানকে সদস্য করা হয়েছে।

কমিটিতে স্থানীয় সাংসদ এনামুল হকের বিরোধী হিসেবে পরিচিতদের কয়েকজনকে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বীরেন্দ্রনাথ সরকার, জাকিরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, মামুনুর রশিদ, ইয়াছিন আলী, মকবুল হোসেন মৃধা। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

কমিটির বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, এবারই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও ত্যাগী ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ব্যক্তির কমিটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন কেউ দলের সঙ্গে জড়িত নন। এ ছাড়া তাঁদের পরিবারের কেউ অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত থাকা প্রসঙ্গে বলেন, এর আগেও তাঁরা কমিটিতে ছিলেন। এই কমিটি উপজেলা আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।