বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ির সামনে বহিরাগতদের সশস্ত্র মহড়া

ঘন কুয়াশা ও কন কনে শীত উপেক্ষা করে নির্বাচন শুরুর আগেই লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় মানুষ। শনিবার কুমিল্লার বরুড়া পৌরসভার কাশামী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার বরুড়া পৌরসভা নির্বাচনে শক্তি প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় নিশ্চিত ভোটার ছাড়া অন্য দল এমনকি নিজ দলের কোনো নেতা-কর্মী ও সমর্থককে ভোটকেন্দ্রে আসতে দেয়নি দলটি। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ির সামনে অস্ত্র নিয়ে বহিরাগত লোকজন মহড়া দিয়েছেন। সাধারণ ভোটাররাও ভোট দিতে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। হামলার আশঙ্কায় বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে ভোটকেন্দ্রের সামনে দেখা যায়নি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী দুটি কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বাধা পেয়ে ফিরে আসেন।
শনিবার বরুড়া পৌরসভা নির্বাচনে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে অন্তত ১৫টি ভোটকেন্দ্রে। জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দেওড়া আজগরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আরেকটি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স নিয়ে রওনা হন। পরে সেটি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া লতিফপুর ভোটকেন্দ্রে ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার হন চ্যানেল ২৪-এর কুমিল্লা প্রতিনিধি ও সংবাদ-এর জেলা প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান। তাঁর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয় ও মুঠোফোন ভেঙে ফেলা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল আটটায় ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোট গ্রহণ শুরু হয় লতিফপুর ভোটকেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের গা ঘেঁষে বহিরাগত লোকজন মহড়া দেন। কিছুক্ষণ পরপর ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী আনারস প্রতীকের রানু বেগম ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে দুটি ব্যালট বাক্স নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। দুপুরে এই কেন্দ্রে চ্যানেল ২৪-এর কুমিল্লা প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। শুশুণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশের বিভিন্ন সড়কে, নয়নতলা ও শালুকিয়া ভোটকেন্দ্রের পাশের বিভিন্ন সড়ক ও বাড়ির মুখে ভারী ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চোখে পড়ে। তবে হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। কসামি ভোটকেন্দ্রেও সারি ছিল।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও টানা দুবারের মেয়র মো. জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। ধানের শীষ প্রতীকের ভোটারদের বাড়ি ও তাঁদের রাস্তার সামনে ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা ও মহড়া বসানো হয়। অর্জুনতলা ও নয়নতলা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। বহিরাগত লোকজনকে দিয়ে ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়ার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি।

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. বক্তার হোসেন বলেন, ‘বিএনপি ভোটের প্রচারণায়ও ছিল না। ভোটের দিনও কেন্দ্রে আসেনি। এলে তো বাধা দেওয়ার প্রশ্ন আসত। পৌরবাসী উন্নয়নের জন্য এবার নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিক্ষিপ্ত ছোটখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
নির্বাচনে বরুড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. বক্তার হোসেন ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মীর হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। তাঁরা প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ২০০৪ সালের পর এবারই আওয়ামী লীগ বরুড়ায় মেয়র পদে জয়ী হয়।