বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে ডুবিয়েছে ‘মনের বাঘ’

বিএনপির মেয়র প্রার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট বর্জন করেন। এজেন্টদের বের করাসহ নানা অভিযোগে তিনি ভোট বর্জন করেন।

সৈয়দ হাসান সারোয়ার
ছবি: সংগৃহীত

তখন সকাল গড়িয়ে দুপুরও হয়নি। ভোট শুরুর মাত্র তিন ঘণ্টা পেরিয়েছে। কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে দৃশ্যমান বিশৃঙ্খলা নেই। এই যখন পরিসংখ্যান, ঠিক সেই সময় অনিয়মের অভিযোগ তুলে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল মিল্লাত ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেন। ফলে দিন শেষে ফলাফলও গেল তাঁর বিপক্ষে। বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ হাসান সারোয়ার জয় পেয়ে যান।

ভোটের দিন কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরের পরিবেশ শান্ত থাকার পরও দুপুর গড়ানোর আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর বিএনপির সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের ভেতরেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং বনের বাঘ নয়, মনের বাঘের ভীতি হিসেবে দেখছেন দলটির অনেক নেতা-কর্মী। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভোট বর্জনের পরও ধানের শীষ প্রতীকে ৪ হাজার ২৯০ ও নৌকা প্রতীকে ১৩ হাজার ২৪৩ ভোট পড়ে।

পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষ ছাড়া আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। নৌকার সৈয়দ হাসান সারোয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চেয়েও দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। শেষে বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারেননি।

ধানের শীষের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব নুরুল মিল্লাত দলটির উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব। কখনো সাধারণ সম্পাদক, আবার কখনো সদস্যসচিব পদে থেকে দলের নেতৃত্ব আছেন দুই যুগ। এর আগে তিনি দুবার এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একবার জয় পান। একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। চারবার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।

নির্বাচনে মনের সাহস ধরে রাখতে হয়। ধানের শীষের প্রার্থী সকালবেলায় সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর কর্মীরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। মনের বাঘই তাঁদের খেয়েছে।
সৈয়দ হাসান সারোয়ার, আওয়ামী লীগের বিজয়ী মেয়র প্রার্থী

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, নুরুল মিল্লাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তিনি বিনয়ী মানুষ। রাজনীতিতে উল্লেখ করার মতো তাঁর মন্দ দিক নেই। প্রার্থী হিসেবে তিনি সব সময় শক্তিশালী। ভোটের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে। তাই অনুকূল পরিস্থিতিতে ভোট থেকে সরে আসার কারণ খুঁজতে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে দলটির নড়বড়ে সাংগঠনিক ভিত। ভোটের আগে প্রচারণায় ভালো করলেও নির্বাচনের দিন বিএনপির নেতা–কর্মীরা ততটা তৎপর ছিলেন না।

বিএনপির কয়েকজন নেতা–কর্মী বলেন, নানা কারণে নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে গেছে। তাঁরা সাহস হারিয়েছেন। এ অবস্থায় এজেন্টদের মধ্যে অনেকে সামান্য প্রতিকূল পরিবেশেই কেন্দ্র ছেড়ে চলে এসেছেন। ফলে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টশূন্যতা দেখা যায়। এসব তথ্য যখন প্রার্থীর কান পর্যন্ত পৌঁছায় তখন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন প্রার্থী। ফলে তড়িঘড়ি করে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

বর্জনের সময় নুরুল মিল্লাত বলেন, ‘দেশটিতে নির্বাচনের সংস্কৃতি বলে কিছু একটা ছিল, আওয়ামী লীগ এসে তা পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। ভোট শুরুর প্রথম ভাগেই প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। একটি কেন্দ্রে আমার সঙ্গে অসাদাচরণ করা হয়েছে। আর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে আমার কর্মীদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি পুলিশ গিয়ে নির্বাচনের আগে কর্মীদের এলাকায় না আসার হুমকি দিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় সরে দাঁড়ানো ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিজয়ী মেয়র প্রার্থী হাসান সারোয়ার বলেন, ‘নির্বাচনে মনের সাহস ধরে রাখতে হয়। ধানের শীষের প্রার্থী সকালবেলায় সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর কর্মীরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। মনের বাঘই তাঁদের খেয়েছে।’