বিএসএফের ফেরত দেওয়া সেই পুলিশ সদস্যসহ চারজনের নামে মামলা

পঞ্চগড়ের ঘাগড়া সীমান্ত এলাকা
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) ওমর ফারুকসহ (২৪) চারজনের নামে মামলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ লাইনসে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোশারফ হোসেন (৪০) ও ওমর ফারুককে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গত সোমবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ওই দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজনের নামে একটি মামলা করেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্তের মমিনপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম (৪৫) ও মাসুদ নামের এক ব্যক্তি।

গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘাগড়া সীমান্তের মমিনপাড়া এলাকায় ভারতীয় নাগরিকেরা পুলিশ সদস্য ওমর ফারুককে আটক করে বিএসএফের কাছে সোপর্দ করেন। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শেষে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া হয়।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ঘাগড়া সীমান্তের মমিনপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম একজন মাদক ব্যবসায়ী। আমিরুলের বাড়ির পরেই ভারতের সীমানা শুরু। তাঁর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ভারতের সিপাইপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ভুট্টোর মাদক সম্পর্কিত যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের এএসআই মোশারফ হোসেন ও পুলিশ সদস্য ওমর ফারুক ধীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ী আমিরুলের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশের এএসআই মোশারফ হোসেন, পুলিশ সদস্য ওমর ফারুক, মমিনপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম ও মাসুদ নামের এক ব্যক্তি সীমান্ত অতিক্রম করে ভুট্টোর বাড়িতে যান। একপর্যায়ে ভুট্টোর সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকটি শুরু হলে ওই দুই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে থাকা হাতকড়া ভুট্টোর হাতে পরাতে উদ্যত হন। এ সময় ভুট্টোর চিৎকারে তাঁর স্বজন ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ওমর ফারুককে আটক করেন। বাকি তিনজন পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

পরে ভারতীয়রা ওমর ফারুককে ধরে মারধর করেন এবং ভারতের চানাকিয়া বিএসএফ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেন। ঘটনার পর খবর পেয়ে ওই সীমান্ত এলাকার টেনশন মার্কেট নামের একটি বাজার থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ওমর ফারুকের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

পরদিন সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঘাগড়া সীমান্তের মমিনপাড়া এলাকায় ৭৫৩ নম্বর মেইন পিলারের কাছে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শেষে পুলিশ সদস্য ওমর ফারুককে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে বিজিবি ওই পুলিশ সদস্যকে পঞ্চগড় জেলা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের সময় ওই পুলিশ সদস্যের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।

পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর তদন্ত করে জানা গেছে বিএসএফের ফেরত দেওয়া পুলিশ সদস্য ওমর ফারুকের সঙ্গে পুলিশ লাইনসে কর্মরত এএসআই মোশারফ হোসেন, মমিনপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম ও মাসুদ নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। পরে সোমবার রাতেই তাঁদের নামে একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পতাকা বৈঠকের মধ্যেমে বিএসএফের ফেরত দেওয়া পুলিশ সদস্যকে পুলিশের হাতেই তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

আরও পড়ুন