বিকল্প স্ট্যান্ড না দিলে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি

সিলেটের চৌহাট্টায় ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে গেলে মেয়র, কাউন্সিলর, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও পুলিশের ওপর পরিবহনমালিক–শ্রমিকেরা হামলা চালান। এ সময় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে
ফাইল ছবি

অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের আগে বিকল্প স্ট্যান্ড করার জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়াসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। আগামী রোববারের মধ্যে তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার রাতে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় তিনটি দাবি তুলে ধর্মঘটের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। পরিবহনশ্রমিক সংগঠনের তিনটি দাবি হচ্ছে চৌহাট্টা থেকে উচ্ছেদের আগে বিকল্প স্থানে স্ট্যান্ডের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া, ভাঙচুর করা গাড়ির ক্ষতিপূরণ ও আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

চৌহাট্টায় ফুটপাত ও সড়ক বিভাজক নির্মাণের জন্য মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুই দফা সংঘর্ষে কাউন্সিলরসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা অস্ত্র উঁচিয়ে মেয়র-কাউন্সিলরদের ধাওয়া করতে যান। গতকাল বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অবৈধ স্ট্যান্ডে রাখা মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকারসহ ১৯টি গাড়িতে ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ১৬টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে এই হামলার ঘটনায় গতকাল রাতে নগর ভবনে সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে সিটি করপোরেশন মতবিনিময় সভা করেছে। সভায় সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

হামলা করে আবার ধর্মঘট আহ্বান কেন—তা জানতে চাইলে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজি ময়নুল ইসলাম দাবি করেন, স্ট্যান্ড উচ্ছেদের নামে তাঁদের ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। গাড়ি ভাঙা ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাঁদের সাত থেকে আটজন শ্রমিক। এ জন্য সর্বসম্মতভাবে তিনটি দাবি আদায় করে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাওয়া হয়েছে। এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না, সমাধান চাই। আমরা রোববার পর্যন্ত চার দিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে তিনটি দাবি আদায় করে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। তা না হলে আগামী সোমবার থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে আমাদের।’

আলটিমেটাম দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকাকে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা বলে মন্তব্য করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চৌহাট্টায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড হয়েছে। প্রাইভেটকার ও ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসের জন্য স্ট্যান্ড করে দেওয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয়। তারপরও আমরা সহানুভূতিশীল হয়ে তাঁদের খালি জায়গা দেখতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা তা না শুনে আমাদের ওপর হামলা চালান। এখন উল্টো দাবি করে নাগরিক ভোগান্তির অপচেষ্টায় নেমেছেন তাঁরা।’

উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত

এদিকে গতকালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানে সর্বদলীয় রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখা ও হামলার ঘটনায় পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বদলীয় ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর।

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে নয়টায় সভা শেষে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সভার শুরুতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজম খান, ফরহাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ তৌফিক বকস, রেজওয়ান আহমদ, সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মো. ছয়ফুল আমীন, আফতাব হোসেন খান, রকিবুল ইসলাম ও তাকবির ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ ও উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী, প্রবীণ রাজনীতিবিদ লোকমান আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মঈনুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরীসহ পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঐকমত্যের ভিত্তিতে নগরীর উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে মতবিনিময় সভায় বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এই বছরে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তা-ই বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। নগরীর কেন্দ্রস্থলের চৌহাট্টায় ফুটপাত দখল করে একটি অবৈধ স্ট্যান্ড নাগরিকদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। এটি রক্ষা করতে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা হয়েছে। এই বাধা ডিঙিয়ে সবার সহযোগিতায় উন্নয়নকাজ অব্যাহত থাকবে।