বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা, সকালে ট্রাক্টরচাপায় মৃত্যু

ট্রাক্টরের নিচে পিষ্ট শাকিল হোসেনের স্বজনদের কান্না
ছবি: প্রথম আলো

বিয়ে করেছেন দুই সপ্তাহ হলো। স্ত্রীকে নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা। এর আগেই সকালে ইটভাটার ট্রাক্টরের নিচে পিষ্ট হলেন শাকিল হোসেন (১৮)। যে ইটভাটায় চাকরি করেন সেই ইটভাটার ট্রাক্টরই জীবন কেড়ে নিল তাঁর। সকাল ১০টার দিকে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় খোয়ারপাড়া মহল্লার একটি ইটভাটায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। শাকিলের এমন মৃত্যুতে কান্নার রোল পড়েছে তাঁর পরিবারে।

নিহত শাকিল হোসেন পাশের গাড়িষাপাড়া মহল্লার আবদুল খালেকের একমাত্র সন্তান। দুই সপ্তাহ আগে আনন্দনগর মহল্লার আলম প্রামাণিকের মেয়ে আনিকাকে বিয়ে করেন তিনি। আজ দুপুরে জামাইসহ মেয়েকে নিতে আসার কথা ছিল আনিকার স্বজনদের। এজন্য উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল উভয় পরিবারে।

প্রতিবেশীরা জানায়, শাকিল খোয়ারপাড়া মহল্লার এমডিবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায় দেখভালের কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো আজও সকালে ইটভাটায় যান তিনি। একটি ট্রাক্টর পাশের একটি পুকুর থেকে মাটি এনে ইটভাটায় নামানোর সময় পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান শাকিল। ঘটনার পর থেকেই ট্রাক্টরটির চালক রতন আলী (২২) লাপাত্তা।

ইটভাটার ট্রাক্টরের নিচে পিষ্ট শাকিল হোসেন দুই সপ্তাহ আগে বিয়ে করেন
ছবি: সংগৃহীত

সরেজমিনে দেখা যায়, বিয়ের দুই সপ্তাহ না যেতেই স্বামীর এমন মৃত্যুতে মাতম থামছেই না আনিকার। শাকিলের মা রবেলা খাতুন ছেলে হারানোর শোকে মুর্ছা যাচ্ছিলেন। নির্বাক শাকিলের বাবা আবদুল খালেক। প্রতিবেশীরা ও স্বজনরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

আবদুল খালেক কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর সুখেই দিন কাটছিল তাঁর। অনেক সাধ করে ঘরে নতুন বউ এনেছিলেন। কিন্তু ঘাতক ট্রাক্টর তাঁর সব সুখ-স্বপ্ন মাটি করে দিয়েছে। তিনি ট্রাক্টরচালকের শাস্তি দাবি করেন।

একই দাবি জানিয়ে আনিকার বাবা আলম প্রামাণিক বলেন, মেয়ের সুখের জন্য জন্য একটি সুখী পরিবারে ভালো ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সে মেয়ের সুখ নষ্ট হবে, ভাবতে পারছেন না কিছুতেই।

ইটভাটার মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, শাকিল ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাড়িতে ও ইটভাটায় কাজ করে আসছেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে ব্যথিত তিনি। দায়বদ্ধতা থেকে শাকিলের পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন বলে জানান তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, ঘাতক ট্রাক্টরটিকে ইটভাটা থেকে জব্দ করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে মামলার প্রস্তুতিও চলছে।