বিক্রি হয়ে যাওয়া নবজাতক ডিসির উদ্যোগে ফিরে পেল মায়ের কোল

নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বিক্রি হওয়া নবজাতকটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

ঋণ শোধ করার জন্য বিক্রি করে দেওয়া নিজের ২২ দিনের নবজাতকটিকে আবার ফিরে পেয়েছেন নাটোরের সেই ভ্যানচালক দম্পতি। উদ্ধারের পর আজ বুধবার দুপুরে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। একই সঙ্গে ওই দম্পতিকে একটি নতুন ভ্যান, নগদ অর্থসহ খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে ‘ঋণ শোধে ২২ দিনের মেয়েকে বিক্রি করার অভিযোগ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন নজরে আসে নাটোরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি)। ওই প্রতিবেদনে ঋণ শোধ করার জন্য বড়াইগ্রামের কয়েন গ্রামের রেজাউল করিম-ফুলজান বেগম দম্পতি তাঁদের ২২ দিনের শিশুকন্যাকে অন্যের কাছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় হস্তান্তরের কথা উঠে আসে।

ডিসি তাৎক্ষণিক বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে শিশুটির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। আজ সকালে বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটিকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সারাইকান্দি কারিগর পাড়ার রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

আজ সকালে বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটিকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সারাইকান্দি কারিগর পাড়ার রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আজ দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে ওই দম্পতির কাছে ফিরিয়ে দেন। শিশুকন্যাকে কোলে তুলে নিয়ে মা ফুলজান বেগম আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় আমি আমার কোলের ধনকে অন্যের কোলে তুলে দিছিলাম। প্রশাসন তারে আনি দিয়া আমার কোলডা ভরায়ছে। আমি খুব খুশি হয়ছি।’

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘খবর পড়ে শিশুটি ও তার মা-বাবার জন্য মায়া হয়েছিল। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দিতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’ ডিসি বলেন, যে অভাবের কারণে ভ্যানচালক দম্পতির এই দুর্দশা, তা নিরসনেও প্রশাসন কাজ করছে। ওই দম্পতিকে টাকা, খাদ্যসামগ্রী ও ভ্যানগাড়ি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন তাঁদের জন্য সরকারি খরচে একটি ঘর দেওয়ারও ব্যবস্থা করবে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ওই পরিবারকে ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হবে। এতে ওই ভ্যানচালক অর্থ জমিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন

শিশুটিকে হস্তান্তরের সময় বড়াইগ্রাম ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম, নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।