বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বরিশালে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের হাতে আটকের তিন দিন পর শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিম ওরফে রেজার (৩০) মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রেজাউলের বাবা ইউনুস মুনশি বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে ওই আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আবেদনটি নিষ্পত্তি করে ওই আদেশ দেওয়া হয়। আদালত বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে ভুল নেই। যেহেতু বাদী চাইছেন ও আইনে বিধান আছে, সুতরাং তাঁর সন্তুষ্টি অনুসারে বিচারিক তদন্ত হোক।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন।

নিহত রেজাউলের স্ত্রী মারুফা আক্তার বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে ডিবি পুলিশ আটক করার তিন দিন পর মৃত্যুর ঘটনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ এর (ক) ধারার ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বরিশালের আদালত এ ঘটনা পুলিশকে (পিবিআই) তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট বিভাগ সেটি বদল করে বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ঘটনার বিচারিক তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ এখন পুলিশের বদলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে।

৫ জানুয়ারি রেজাউল করিম পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে ডিবির উপপরিদর্শক মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। বরিশাল মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন রেজাউল করিমের বাবা ইউনুস মুনশি।

রেজাউলের বাবার করা মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে রেজাউল করিমকে আটক করেন এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপর রেজাউলের কাছে দুজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানতে চান এসআই মহিউদ্দিন। কিন্তু রেজাউল নাম জানেন না বলে জানালে তাঁকে ধরে নিয়ে যান এসআই মহিউদ্দিন। এরপর রেজাউলের পকেটে নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়া গেছে, এমন অভিযোগে তাঁকে আটক দেখানো হয়। এরপর রেজাউলের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে আহত রেজাউলকে থানার মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জানুয়ারি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় রেজাউলের।

মামলা করার পর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় ৮ ফেব্রুয়ারি রেজাউলের বাবা ইউনুস মুনশি বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে ওই আবেদন করেন।