বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোহিঙ্গা মাদকব্যবসায়ী নিহত, অস্ত্র ও ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

বন্দুকযুদ্ধ
প্রতীকী ছবি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মো. আবদুর রহিম (২৫)। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-১ এর এ-৭ শেডের বাসিন্দা ওবায়দুল হকের ছেলে। মিয়ানমার থেকে একটি দলের সঙ্গে ইয়াবার চালান নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসছিলেন।
আজ শুক্রবার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইশফাঁড়ি সীমান্তে (মিয়ানমার) এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি দেড় কোটি টাকা মূল্যের ৫০ হাজার ইয়াবা, দেশীয় দুই নলা একটি বন্দুক ও চারটি কার্তুজ উদ্ধার করেছে। গোলাগুলির ঘটনায় বিজিবির দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান বাংলাদেশে আসছে, এমন খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ বাইশফাঁড়ি সীমান্তে (সীমান্ত পিলার-৩৬/২ এসের আনুমানিক ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে) অবস্থান নেয় বাইশফাঁড়ি বিওপির পৃথক দুটি টহল দল। ভোর পৌনে চারটার দিকে টহল দল দেখতে পায়, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ি হাঁটা পথে বাংলাদেশের দিকে আসছে ৮-১০ জনের মাদক পাচারকারী দল। বিজিবি সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করলে মিয়ানমারের দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে দলটি পাহাড়ি জঙ্গল দিয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়। পরে বিজিবি টহল দল ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আবদুর রহিমকে আটক করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুইনলা একটি বন্দুক, ৫০ হাজার ইয়াবা ও বন্দুকের চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আহত আবদুর রহিমকে উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অবস্থায় আবদুর রহিম নিজের পরিচয় নিশ্চিত করেন বিজিবিকে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গোলাগুলির ঘটনায় বিজিবির দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে বিজিবি। প্রায় প্রতিদিন ইয়াবার বড় চালান ধরা পড়ছে। গত এক বছরে ৩৪ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ১১০ কোটি ২২ লাখ টাকা দামের ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ১ পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছেন। এ সময় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩২৩ জন মাদক কারবারিকে।
২০ জানুয়ারি ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় ৫৩৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে ইয়াবা ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৪ হাজার ১১২টি, যা গত তিন বছরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পাচারের সময় জব্দ করে বিজিবি।
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী, মানব পাচারকারী দালাল চক্র ও ডাকাত দলের এবং মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে গোলাগুলির ঘটনায় চার নারীসহ শুধু কক্সবাজার জেলায় ২৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দুই নারীসহ ১০৫ রোহিঙ্গাও।