‘বিদেশি যুদ্ধজাহাজ বানাতে সক্ষম খুলনা শিপইয়ার্ড’
খুলনা শিপইয়ার্ড এখন বেশ সমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করে নৌবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অব নেভাল স্টাফ (ম্যাটেরিয়াল) রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শফিউল আজম বলেছেন, এই শিপইয়ার্ড দেশীয় যুদ্ধজাহাজ তৈরির পাশাপাশি এখন বিদেশি যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতেও সক্ষম।
আজ সোমবার সকালে খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজ লঞ্চিং অনুষ্ঠান শেষে শফিউল আজম সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ডে বিদেশি নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ তৈরির সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। বিদেশে মার্কেটিং করার জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের বন্ধুপ্রতিম যেসব রাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করবে, অবশ্যই আমরা সেসব দেশকে বাংলাদেশের মতো যুদ্ধজাহাজ বা সমমানের অন্য ধরনের জাহাজ বানিয়ে দেব। আমরা আশাবাদী যে অদূর ভবিষ্যতে আমরা এ ধরনের কার্যক্রমে যাব।’
নৌবাহিনীর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, খুলনা শিপইয়ার্ডই নৌবাহিনীর জন্য প্রথম যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে। এ ইয়ার্ড সাকল্য ৭৭৫টি জাহাজ নির্মাণ ও ২ হাজার ৩৬৩টি জাহাজ মেরামতের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য প্রথম ব্যাচে পাঁচটি প্যাট্রোল ক্রাফট (যুদ্ধজাহাজ) ও দুটি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট তৈরি করে সফলভাবে হস্তান্তর করেছে। দ্বিতীয় ব্যাচে আরও পাঁচটি প্যাট্রোল ক্রাফট নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম যুদ্ধজাহাজটি লঞ্চিং করা হলো। চলতি বছরের মধ্যে বাকি চারটি জাহাজ হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে শফিউল আজম নৌবাহিনীর জন্য নির্মিত দ্বিতীয় ব্যাচের প্রথম যুদ্ধজাহাজটি লঞ্চিং (নির্মাণ শেষে পানিতে ভাসানো) করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে খুলনা নৌঘাঁটি তিতুমীর ও খুলনা শিপইয়ার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা শিপইয়ার্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৬৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল খুলনা শিপইয়ার্ড। আশির দশকের দিকে সেটি লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এরপর ১৯৯৯ সালের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ইয়ার্ডটি উন্নয়নশীল লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে ৪৩ দশমিক ২২ কোটি টাকা।
নতুন তৈরি যুদ্ধজাহাজ
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা নতুন যুদ্ধজাহাজটির নাম বানৌজা শহীদ দৌলত। এটি একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ। এর আকার আয়তন অপেক্ষাকৃতভাবে কিছুটা ছোট হলেও এর সক্ষমতা অধুনা বিশ্বে ব্যবহৃত স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলজি-সংবলিত অন্যান্য যুদ্ধজাহাজের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই জাহাজে রয়েছে আধুনিক সামরিক সক্ষমতা। রয়েছে একটি ৪০-৬০ মিলিমিটারের বফরস গান ও দুটি ১২ দশমিক ৭ মিলিমিটারের মেশিনগান।
জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৫১ দশমিক ৬৫ মিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৫০ মিটার আর গভীরতা ৪ দশমিক ২০ মিটার। ৩০৭ টন ওজনের ওই জাহাজে দুটি ইঞ্জিন রয়েছে, যার প্রতিটির শক্তি ৩ হাজার ৪১ হর্স পাওয়ার। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২১ নটিক্যাল মাইল। চায়না ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি (সিসিএস) জাহাজটি নির্মাণে সার্বিক সহায়তা করেছে।