বিনা পারিশ্রমিকে হাসি ফোটান যে আলোকচিত্রী

বিয়ের সাজে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম ও নাসরীন আক্তার। ছবি: নাসিফ ইমতিয়াজ
বিয়ের সাজে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম ও নাসরীন আক্তার। ছবি: নাসিফ ইমতিয়াজ

নারায়ণগঞ্জের তরুণ আলোকচিত্রী নাসিফ ইমতিয়াজ গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিয়ের সিজন শুরু হচ্ছে! আপনাদের পরিচিত এমন কেউ যদি থাকেন, যাঁর আর্থিক অবস্থা একেবারে খারাপ। বিয়েতে ফটোগ্রাফার নেওয়ার সামর্থ্য নেই। আমাকে জানাবেন। আমি ফ্রিতে তাঁদের বিয়ের ছবি তুলে দেব।’ প্রতিবছরই বিয়ের মৌসুমে এমন ঘোষণা দেন তিনি।

নাসিফ ইমতিয়াজের আলোকচিত্রের সঙ্গে সিরিয়ার আহমেদ দেরগাম। ছবি: সংগৃহীত
নাসিফ ইমতিয়াজের আলোকচিত্রের সঙ্গে সিরিয়ার আহমেদ দেরগাম। ছবি: সংগৃহীত

আজ শুক্রবার ইমতিয়াজের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘অনেকে আছেন, যাঁরা অন্যের বিয়ের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তাঁরাও তাঁদের বিয়ের ছবি পেশাদার আলোকচিত্রী দিয়ে তোলাতে চান। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকায় পারেন না। তাঁদের কথা ভেবেই আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। বিনা পারিশ্রমিকে আমি তাঁদের ছবি তুলে দিই। অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের প্রাধান্য দিই।’ ইমতিয়াজ আরও বললেন, ‘যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাঁদেরও নিজেদের বিয়ের মুহূর্তগুলো স্মৃতিময় করে রাখার অধিকার আছে। আমরা আলোকচিত্রীরা এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারি।’

বিনা পারিশ্রমিকে ইমতিয়াজ এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ের ছবি তুলেছেন। প্রথম তুলেছিলেন নারায়ণগঞ্জের এক মুদি দোকানির বিয়ের ছবি। তারপর তোলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও নাসরীন আক্তারের ছবি। সবশেষ তুলেছেন কুমিল্লার একজন নছিমনচালকের বিয়ের ছবি। কোনো বিয়ের ছবির জন্য তিনি একটি টাকাও নেননি।

আলোকচিত্রী নাসিফ ইমতিয়াজ। ছবি: আবদুস সালাম
আলোকচিত্রী নাসিফ ইমতিয়াজ। ছবি: আবদুস সালাম

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাসেলের মাধ্যমে ইমতিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমাদের প্রেমের বিয়ে। বিয়ের কয়েক দিন পর আমি নারায়ণগঞ্জে বেড়াতেই যাই। তখনই ইমতিয়াজ ভাই আমাদের বিয়ের সাজে ছবি তুলে দেন। খুব ভালো লেগেছে।’ ইমতিয়াজের তোলা ছবির সুবাদে দৃষ্টিহীন রফিক-নাসরীন দম্পতির গল্প কলকাতায় পৌঁছায়। এই দম্পতিকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা চলছে বলেও ইমতিয়াজ জানালেন।

সুযোগ পেলেই মানবিক আবেদনে সাড়া দিতে চান ইমতিয়াজ। ২০১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দুই হাত হারানো শিশু আহমেদ দেরগামের চিকিৎসার জন্য নিলামে নিজের ছবি দান করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি দাতব্য সংস্থার লোগোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে ইমতিয়াজের আলোকচিত্র।

ইমতিয়াজের জন্ম ১৯৯৩ সালে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই আলোকচিত্রের প্রতি তাঁর ঝোঁক। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজ করেছেন মাদ্রাসাশিক্ষা, বেদেদের জীবন এবং আর্ট-ফটোগ্রাফি নিয়ে। তাঁর ছবি হাফিংটন পোস্টসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভাসমান লোকজনের জীবন নিয়ে করা তাঁর ‘নোবডি কেয়ার্স’ শীর্ষক ফটো-সিরিজ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সাংবাদিকতা বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে।