বিবাহিত-অছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ

টাকার বিনিময়ে অছাত্র, বিবাহিত এবং ছাত্রলীগ করেন এমন তরুণদের নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। নতুন আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে গণপদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. আবু সাঈদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে সর্বশেষ উপজেলা ছাত্রদলের ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আবদুর রাজ্জাক সভাপতি ও ওমর ফারুক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারা ও ৯ সদস্যের ৬ জনই বিবাহিত হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বিলুপ্ত করে জেলা ছাত্রদল। পরে কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত নেয় জেলা ছাত্রদল।

ছাত্রদলের নেতা আবু সাঈদ লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, আগে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়েছিলেন গঠনতন্ত্র মেনে অবিবাহিত ও নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হবে। ওই সময়ে আহ্বায়ক পদে ৪ জনসহ মোট ১৩ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। ৬ অক্টোবর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। মো. নাঈম আলীকে আহ্বায়ক ও মো. আবু সাঈদকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে ছয়জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে নতুন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস আলী, সাব্বির আহম্মেদ ও মো. সামসুজ্জোহা বক্তব্য দেন।

উপজেলা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ৬–এর ১(খ) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘বাংলাদেশের নাগরিক এবং অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরাই কেবল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য/সদস্যা হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।’ কিন্তু বর্তমানে ছাত্রদলের কমিটিতে যাঁকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি নিয়মিত ছাত্র নন। অবাক করার মতো বিষয় হলো, তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গেও কখনো জড়িত ছিলেন না।

ছাত্রদল নেতা আবু সাঈদ বলেন, ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক নাঈমের জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ২০০৮ সালে এসএসসি পাস করার পর লেখাপড়া ছেড়ে দেন। ২০২০ সালে তিনি আবার উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। শুধু ছাত্রদলের পদ পাওয়ার জন্যই তিনি কলেজে ভর্তি হয়েছেন।

কমিটির সদস্য সৈয়দ উমের আলী, মো. মামুন ও মো. শাহিনুর ছাত্র নন এবং তাঁরা বিবাহিত। যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম হোসেনকে এলাকায় কেউ চেনেন না।

নতুন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস আলী বলেন, কমিটির সদস্য সৈয়দ উমের আলী, মো. মামুন ও মো. শাহিনুর ছাত্র নন এবং তাঁরা বিবাহিত। যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম হোসেনকে এলাকায় কেউ চেনেন না। আর সদস্যপদ পাওয়া মো. রাসেলের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আগের কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদলকে দুর্বল করতেই এমন কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

টাকা নিয়ে এবং বিবাহিত ও অছাত্রদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ কায়েস বলেন, ছাত্রদলের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী ২০০৫ সালের আগে যাঁরা এসএসসি পাস করেছেন, তাঁদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা যাবে না। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে সেই নীতিমালা মেনেই যোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে।