বিলীন হওয়ার পথে বিদ্যালয়ের ভবন

মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মঙ্গলবার বিকেলে কালকিনি উপজেলায় চর হোগলপাতিয়া এলাকায়।প্রথম আলো

আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আলীনগর ইউনিয়নের চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন বিদ্যালয়ের ভবনের কাছে চলে এসেছে। নদীর ভাঙন চলতে থাকায় বিদ্যালয়ের ভবনটি এখন যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে স্কুলটির আশপাশে অর্ধশত বসতঘর ও দোকান বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় বিদ্যালয়টির আশপাশের লোকজন বসতভিটা ভেঙে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আড়িয়াল খাঁ ও পালরদী নদীর ভাঙনে উপজেলার সাহেবরামপুর, সিডিখান, বাঁশগাড়ি, আলীনগর, পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর–পখিরাসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে আলীনগর ইউনিয়নের চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। এর আগে ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে এই বিদ্যালয়ের স্থাপনা আড়িয়াল খাঁ নদীর গর্ভে বিলীন হয়।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে ১৫০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এর মধ্যে ৮৩ জনই ছাত্রী। এখন বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় পড়েছি।’
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে গেলে এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন হতে পারে। তাই ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের হাজারো মানুষ।
আলিনগর এলাকার বাসিন্দা আবদুল রহমান বলেন, ‘নদীভাঙনে আমার জমিজমা সব শেষ। এখন থাকার ঘরটাও ভাঙনের মুখে। যেভাবে নদীর পাড় ধসে পড়ছে, তাতে বাড়িঘর হারিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। খুব বিপদের মুখে আছি আমরা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে। স্কুলটি বিলীন হলেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য অস্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘আলীনগর এলাকার জরুরি ব্যবস্থায় আমরা কিছু কাজ করেছি। যেসব স্থানে নদীভাঙন হচ্ছে, সেখানে নদীর তীর সংরক্ষণে আমরা কাজ করব। বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য ভাঙন ঠেকাতে আমরা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তবে বিদ্যালয়ের ভবনটির যে মূল্য, তার থেকে বেশি মূল্যের জিও ব্যাগ ফেলানো লাগবে। আমরা তবু বালুভর্তি ৮ হাজার ২৪৭টি ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিদ্যালয়টি রক্ষা করা মনে হয় না সম্ভব হবে।’