বিলুপ্তপ্রায় মাছের অভয়াশ্রমটি সংরক্ষণের উদ্যোগ

মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। পরে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

অভয়াশ্রমের মধ্যে কিছু বাঁশ পোঁতা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে সাইনবোর্ড। সম্প্রতি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা নদীতে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় চিত্রা নদীতে বিলুপ্তপ্রায় মাছের অভয়াশ্রম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মৎস্য দপ্তর।

এ সম্পর্কে বাঘারপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ বালা বলেন, ‘দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের জন্য অভয়াশ্রমটি পুনরায় চালু করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে অভয়াশ্রমের মধ্যে কিছু বাঁশ পোঁতা হয়েছে। সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বরাদ্দ পেয়ে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’

বিলুপ্তপ্রায় দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চিত্রা নদীতে গড়ে তোলা হয়েছিল মাছের অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নদীর দুই পাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল ‘চিত্রা নদী উন্নয়ন সমিতি’। দেশি প্রজাতির মাছের প্রজননে অভয়াশ্রমটিতে সাফল্যও এসেছিল। কিন্তু পরিকল্পনাহীনতা ও উদ্যোগের অভাব এবং সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় অভয়াশ্রমটি।

বাঘারপাড়া উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র জানায়, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের জন্য শুষ্ক মৌসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও প্রজনন মৌসুমে বিচরণক্ষেত্র তৈরির জন্য ২০০৩ সালে এ অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়। মৎস্য অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার’ ও বেসরকারি সংগঠন ‘বাঁচতে শেখা’ যৌথভাবে এ উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পের মোট আয়তন ছিল চিত্রা নদীর ১১৮ হেক্টর এলাকা। এর মধ্যে নদীর গভীর ও প্রশস্ত অংশ বাঘারপাড়া থানার পাশের ৪ দশমিক শূন্য ৫ হেক্টর এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। বাকি অংশ মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। স্থানীয় বিল জলেশ্বর থেকে ধলগ্রাম জলকপাট (স্লুইসগেট) পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে গঠন করা হয় ‘চিত্রা নদী উন্নয়ন সমিতি’। সমিতির সুফলভোগী ছিলেন ৪৩৫ জন। সমিতির কর্মকাণ্ড ছিল অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণ, প্রকল্পভুক্ত এলাকায় আড়বাঁধ ও কারেন্ট জাল উচ্ছেদ এবং কচুরিপানা পরিষ্কার।

অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যে সাফল্য পাওয়া যায়। হারিয়ে যাওয়া বোয়াল, রাইক (বাটা), কই, দেশি সরপুঁটি, ট্যাংরা, পাবদা, বাতাসি, রয়না, গাংখয়রা ও চিতল মাছ ফিরে আসে নদীতে। সবচেয়ে বেশি প্রজনন হয় চিতলের। এলাকার হাটবাজারে যথেষ্ট পরিমাণে এসব মাছ উঠতে শুরু করে।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

কিন্তু ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই স্থানীয় চেঁচুয়াখোলা গ্রামের এক নারী সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর থেকে সমিতির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করে। এর মধ্যে ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার’ ও ‘বাঁচতে শেখা’ তাদের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেয়। মৎস্য অধিদপ্তরও অভয়াশ্রমটি নিয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি। ফলে ২০০৯ সালের দিকে পুরো কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অভয়াশ্রমটি ভরে যায় কচুরিপানায়।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ওই মামলার রায় হয়। আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু অভয়াশ্রমটি সংরক্ষণে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।