বিশেষ ব্যবস্থায় চলছে আমদানি–রপ্তানি, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কমিটি

ভারত ও ভুটান থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক ও বাংলাদেশি চালকেরা এভাবেই একসঙ্গে বন্দর এলাকার চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে
ছবি: প্রথম আলো

ট্রাকচালক ও সহকারীদের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চতুর্দেশীয় এই স্থলবন্দরে ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে আসা চালকদের বিশ্রামের জন্য পৃথক শেড তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের জন্য পৃথক চলাচলের রাস্তাসহ শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ট্রাক প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তবে এই স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলছে পুরোদমে।

পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ১৪ দফা নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা সঠিকভাবে মানছিলেন না। পরে ২৭ এপ্রিল বিকেলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের সম্মেলনকক্ষে বন্দর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জরুরি সভা করে তেঁতুলিয়া উপজেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ, প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কমিটি। ওই সভায় বন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুল হককে প্রধান করে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সভা থেকে ১৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারত থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভিনদেশি ট্রাকচালকেরা কাস্টমস চেকপোস্টে গাড়ি থেকে নেমে এখন আর কারপাস জমা দিচ্ছেন না। বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরা চালকদের কারপাস নিয়ে চেকপোস্টে এবং ওজন স্কেলে কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন।

এদিকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে আসা চালকদের জন্য বন্দর এলাকায় পৃথক শেড তৈরি করেছে। গাড়ি থেকে পণ্য নামানো পর্যন্ত সেখানে তাঁরা বিশ্রাম নেবেন। তাঁদের জন্য পৃথক চলাচলের রাস্তাসহ পৃথক শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি চেকপোস্টে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা প্রতিটি ট্রাককে জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দর এলাকায় বাইরের কোনো লোক যেন অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা না করেন, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকের মাস্ক পরিধানের পাশাপাশি বন্দরের শ্রমিকদের পোশাক পরিধান ও বন্দর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বন্দর এলাকায় বাববার মাইকিং করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

বন্দর সূত্রে আরও জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে ২৬০টি ট্রাকে পাথর এবং ভারত থেকে একটি ট্রাকে আদা আমদানি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ৬৮টি ট্রাকে সোয়াবিন, আলু, পাট, ব্যাটারিসহ অন্যান্য পণ্য ভারত ও নেপালে রপ্তানি করা হয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল হাসান বলেন, প্রশাসনের সার্বক্ষণিক তদারকিতে বন্দরে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যবিধি মানানো হচ্ছে। দুই দিন ধরে বন্দরে বিদেশি গাড়িচালকেরা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি থেকে নামছেন না। এ ছাড়া বারবার মাইকিং করায় বন্দর এলাকায় অনেকটা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন ভারত ও ভুটানের চালকেরা প্রত্যেকেই শতভাগ মাস্ক পরছেন। এ ছাড়া চালকেরা যেন তাঁদের গাড়ি থেকে না নামেন, সে জন্য কাস্টমস এন্ট্রি পয়েন্টে ও ওজন স্কেলে চালকদের কারপাসসহ অন্য কাগজপত্র নিতে অতিরিক্ত লোক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চালকদের জন্য আলাদা শেড, শৌচাগার ও চলালচলের রাস্তা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দর এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুল হক বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির সময় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি বন্দর এলাকায় বিদেশি চালকদের নির্দিষ্ট স্থানে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং তা মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশি চালকদের তিনটি ভাষায় (বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি) নির্দেশনাগুলো লিফলেট আকারে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই তিনটি ভাষায় নির্দেশনাগুলো বড় বড় ব্যানার টানিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিদিনই বন্দর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।