বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর অভিযোগ

গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রিপন আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন। শনিবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ারভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে আজ শনিবার মানববন্ধন হয়েছে।

একই দিন ঘটনাটি তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি যান। তাঁরাও মানববন্ধনে অংশ নেন।

ওই শিক্ষার্থী হলেন রিপন আহমেদ। তিনি গ্রিন ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দড়িগাঁও এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে।

রিপনের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ারভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মানববন্ধন করা হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে।

মানববন্ধন চলাকালে জানানো হয়, ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রতনের খামার এলাকার সামনে আবর্জনার স্তূপ থেকে রিপনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৩ জানুয়ারি ইদ্রিস আলী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

রিপন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডকে পুলিশ দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
মো. রায়হান, রিপনের ভাই

রিপনের ভাই মো. রায়হান বলেন, ‘রিপন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডকে পুলিশ দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দাবি, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নাট্য অভিনেতা ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘রিপনের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি, যাতে রিপনের পরিবার ন্যায়বিচার পায়।’

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গ্রিন ইউনিভার্সিটির গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা রিপনের গ্রামের বাড়ি যান। তাঁরা রিপনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর তাঁরা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় রিপনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরিবারের দাবি, রিপনকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব, পরিদর্শক (তদন্ত), দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা

মানববন্ধন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের চেয়ারম্যান ও তদন্ত কমিটির সদস্য অলিউর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর ওয়াজেদ কবির এ কমিটির প্রধান। আরেকজন সদস্য আইন বিভাগের অধ্যাপক আরিফুল হক।’

তদন্ত কমিটির প্রধান ওয়াজেদ কবির বলেন, ‘রিপনের মৃত্যুর দিন কী ঘটেছিল, সেটি জানার জন্য আমরা এখানে এসেছি। এ ব্যাপারে আমরা পর্যায়ক্রমে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা এখনো বিষয়টি নিয়ে সংশয়ে আছি। পুলিশ এখনো মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো উপসংহারে আসতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটির তদন্ত কমিটি, পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য একটিই, আমরা সবাই সত্যে উপনীত হতে চাই। সত্যকে খুঁজে বের করতে চাই। আমরা সত্য উদ্‌ঘাটন করতে পারব বলে আশা করছি।’

জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় রিপনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরিবারের দাবি, রিপনকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তদন্ত চলছে।