বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করলে সরকার ক্ষুব্ধ হয়: আনু মুহাম্মদ

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৯ জানুয়ারি। ছবি: মাইদুল ইসলাম
দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৯ জানুয়ারি। ছবি: মাইদুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সরকার ক্ষুব্ধ হয় বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন ও অভিযোগের সুরাহা না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নিজেদের ২৯তম কাউন্সিল উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। এতে উপাচার্যের অপসারণ দাবি করে আসা আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সরকার ক্ষুব্ধ হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সুরাহা দেখতে পাচ্ছি না। এখানে দুর্নীতি আর সন্ত্রাস একসঙ্গে চলছে। তবে এর বিরুদ্ধে লড়াইটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘দুর্নীতি মানেই হচ্ছে জনগণের সম্পদ ব্যক্তির পকেটে নেওয়া। এভাবে দুর্নীতি করতে হলে সর্বজনের অধিকার খর্ব করতে হয়। আর দুর্নীতি যদি থাকে, সেখানে সন্ত্রাস থাকতেই হয়। এই সন্ত্রাস মানুষের স্বপ্নকে চুরমার করে দেয়। ব্যক্তির প্রতিদিনের জীবনকে বিভীষিকাময় ও নিরাপত্তাহীন করে তোলে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি চত্বরে সকাল ১০টা থেকে শাখা ছাত্র ইউনিয়ন তাদের কাউন্সিল উপলক্ষে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শন শুরু করে। পরে দুপুরে সেখানে সমাবেশ হয়। বেলা সোয়া একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে উপাচার্যকে অপসারণ দাবি করে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’–এর ব্যানার নিয়ে মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক ঘুরে ছবি চত্বরে গিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়।

উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৯ জানুয়ারি। ছবি: মাইদুল ইসলাম
উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৯ জানুয়ারি। ছবি: মাইদুল ইসলাম

সমাবেশে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘৫ নভেম্বরের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক করতালি দিয়ে হামলাকারীদের উৎসাহ দিয়েছেন। আমরা শুধু একটি দুর্নীতির তদন্ত চেয়েছিলাম। সেখানে উপাচার্যের সরে গিয়ে তদন্তের সুযোগ করে দেওয়া উচিত ছিল। অথচ আমাদের অহিংস আন্দোলনে হামলা করা হয়েছে। বল প্রয়োগ করে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা, ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য মিখা পিরেগু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সম্পদ অয়ন মারান্ডি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এই দাবিতে বিক্ষোভ, ধর্মঘটের পর গত ৪ নভেম্বর উপাচার্যের বাসভবন অবরুদ্ধ করেন তাঁরা। পরদিন ৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। এ অবস্থায় গত ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ এক মাস পর গত ৫ ডিসেম্বর থেকে আবার ক্যাম্পাস সচল করা হয়। তবে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।