বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বরে ইলিশের অভয়াশ্রম করার প্রস্তাব

প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ। এরই মধ্যে পানির গুণাগুণ ও খাবার পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

  • বিষখালীতে অভয়াশ্রমের দৈর্ঘ্য হবে ৩৮ কি.মি। নদীর নিম্নাংশ মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

  • প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলের ইলিশ নিয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান হবে।

ইলিশ মাছ
ফাইল ছবি

বরিশাল অঞ্চলের তিনটি প্রধান নদ-নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বরের ইলিশের স্বাদ, পানি ও খাবারের গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কার্যক্রমের প্রাথমিক অগ্রগতি হিসেবে এই তিন নদ-নদীতে তিনটি পৃথক ইলিশের অভয়াশ্রম করার প্রস্তাব দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ প্রকল্প-২–এর গবেষকেরা।

সংস্থাটির গবেষকেরা জানান, এরই মধ্যে তিনটি নদীর পানির গুণাগুণ ও কী ধরনের খাবার রয়েছে, তা পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইলিশের জীবনচক্র ও স্বাদের কারণও অনুসন্ধান করবেন তাঁরা। এ জন্য এসব নদ–নদীর পানি, মাছের খাদ্যকণা প্ল্যাঙ্কটন (পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্র জীব) ও ইলিশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের একজন এবং পানি, খাদ্যকণার গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে যুক্ত করা হচ্ছে। পুরো গবেষণাকর্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইকোফিশ প্রকল্পের দলনেতা ও মৎস্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল ওহাব।

সম্প্রতি প্রথম আলোতে ‘বিষখালী নদীতে ইলিশের ভান্ডার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে বলে জানায় ইকোফিশের গবেষক দল। এরপর বিষখালীসহ সংযুক্ত তিন নদ-নদীর ইলিশের স্বাদ, জীবনচক্র এবং পানির গুণাগুণ ও জীববৈচিত্র্য গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিক গবেষণার পর এই তিন নদীর ইলিশ সম্প্রসারণ, বিচরণ ও বেড়ে ওঠার বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে আলাদা তিনটি অভয়াশ্রম করার প্রস্তাব তৈরি করে দলটি। অভয়াশ্রমের মানচিত্রও তৈরি করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত মানচিত্র অনুযায়ী বিষখালীর নিম্ন-মধ্য অঞ্চল প্রস্থে বড় এবং স্রোত বেশি। নদীটির মধ্যাঞ্চল মাছ ও চিংড়ির বিচরণক্ষেত্র হওয়ায় অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর নিম্নাংশ মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অভয়াশ্রমের দৈর্ঘ্য হবে ৩৮ কিলোমিটার। এর উত্তর-পূর্বে বরগুনার বেতাগী লঞ্চঘাট, উত্তর-পশ্চিমে ঝালকাঠির কচুয়া ফেরিঘাটের দক্ষিণ মাথার বাঁক, দক্ষিণ-পূর্বে বরগুনা সদরের বড়ইতলা ফেরিঘাট ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনার বাইনচটকি ফেরিঘাট।

ইকোফিশের গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলের ইলিশ নিয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান হবে।
আনিসুর রহমান, বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক

পায়রা নদীর অভয়াশ্রমের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এর উত্তর-পূর্বে পটুয়াখালীর পায়রা কুঞ্জ ফেরিঘাট, উত্তর-পশ্চিমে মৃধা বাড়ি রোড ফেরিঘাট, দক্ষিণ-পূর্বে বরগুনার আমতলী ফেরিঘাট ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা সদরের পুরাঘাটা ফেরিঘাট।

বলেশ্বর নদে জাটকার বিচরণক্ষেত্রের ভিত্তিতে উপরি অংশে অভয়াশ্রম প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অভয়াশ্রমের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ কিলোমিটার। উত্তর-পূর্বে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভিটাবাড়িয়া মসজিদ পয়েন্ট, উত্তর-পশ্চিমে পিরোজপুর সদরের দক্ষিণ গাজীপুর মাদ্রাসা এলাকা, দক্ষিণ-পূর্বে পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া স্টিমারঘাট ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগেরহাটের রায়েন্দা শিপইয়ার্ড।

আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বরের ইলিশ সম্পদ নিয়ে এত দিন ধারণা কম ছিল। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ ও প্রাথমিক গবেষণায় এই তিন নদ-নদীতে ইলিশের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে।

বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ইকোফিশের গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলের ইলিশ নিয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান হবে।