বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসা আরও একজনের করোনা শনাক্ত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর
প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসা আরও একজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি একজন নারী, বয়স ৪১ বছর। তবে তিনি করোনার ভারতীয় ধরন দ্বারা সংক্রমিত কি না, সেটি জানা যায়নি।

আজ শুক্রবার ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে বলে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় পরীক্ষার পর জানা যাবে, ওই নারী ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কি না।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ফোকাল পারসন চিকিৎসক কে এম তানজির আলম বলেন, ওই নারী চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। করোনা শনাক্ত হওয়ায় তিনি ওই আবাসিক হোটেলে আইসোলেশনে থাকবেন। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে শুক্রবার নতুন করে আরও ১৮ জন দেশে ফিরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফিরেছিলেন ১৫ জন। এ নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে মোট ২৪৯ জন ভারত থেকে দেশে ফিরলেন।

ওই নারী ৪ মে স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক অভিবাসনচৌকি (আইসিপি) দিয়ে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেন। এর আগে ওই স্থলবন্দর দিয়ে আসা তিন শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ওই তিন শিক্ষার্থী করোনা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত কি না, তা পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এ নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসা চারজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলো। বুড়িমারী স্থলবন্দর পুলিশ অভিবাসনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আজ শুক্রবার নতুন করে আরও ১৮ জন দেশে ফিরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফিরেছিলেন ১৫ জন। এ নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে মোট ২৪৯ জন ভারত থেকে দেশে ফিরলেন। তাঁদের সবাইকে ৯টি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে গত বুধবার ভারতফেরত ২৩ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি–পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব ওই নারীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। বর্তমানে তাঁকে উপজেলার একটি আবাসিক হোটেলে আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তির নমুনার পরীক্ষার প্রতিবেদনে কিছুই না আসায় আবার নমুনা পাঠানো হয়েছে। অন্য ২১ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর
ছবি: প্রথম আলো

এর আগে গত শনিবার ভারত থেকে ফেরত আসা ২৬ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি–পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। পরদিন রোববার তাঁদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। তাঁদের উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাছে আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সঙ্গে তাঁদের অভিভাবক ও বাবা-মা রয়েছেন। ওই দিন অন্য ২৩ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও বুড়িমারী অভিবাসন পুলিশ সূত্রের ভাষ্যমতে, প্রথম দফায় ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের জন্য এ স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ৮ মে দ্বিতীয় দফা আরও ১৪ দিন সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এরপর ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল প্রথম দিন ছয় ব্যক্তি দেশে ফেরত আসেন। পরে পর্যায়ক্রমে ২৪৯ জন দেশে ফিরেছেন।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর ও উপজেলা মিলে সাতটি আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। তা ছাড়া লালমনিরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউট ও সদর হাসপাতালেও কোয়েরেন্টিনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টারও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।