বৃষ্টিতে গৃহহীন মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে

শ্যামনগরের প্রতাপনগর ইউনিয়নে ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৭টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী ও গৃহহীন।

বেড়িবাঁধে মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরির চেষ্টা করছেন লোকজন। গতকাল আশাশুনি উপজেলার বন্যতলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় লোকজন পানিবন্দী ও গৃহহীন হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার বৃষ্টিতে আরেক দফা দুর্ভোগ বেড়েছে।

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নে জোয়ারের তোড়ে ভাঙনকবলিত এলাকা গতকাল বন্যতলা ছাড়া অন্য ছয়টি স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তবে বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরার তিন স্থানে পানি ঢোকা অব্যাহত রয়েছে। ফলে এসব এলাকার পানিবন্দী ও গৃহহীন মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। একই অবস্থা প্রতাপনগর ইউনিয়নের মানুষের। ওই ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৭টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী ও গৃহহীন। গতকাল সকালের বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামের অজিয়ার সানা বলেন, তাঁরা কয়েক দিন খোলা আকাশের নিচে পলিথিন বিছিয়ে ছিলেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর গতকাল সকালে টংঘর বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় বৃষ্টিতে তাঁদের সব ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্টে রয়েছেন।

একই এলাকার ইউসুফ সানা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর টং বেঁধে অস্থায়ীভাবে থাকতে চেয়েছিলেন। পরে বাপ–দাদার ভিটায় আবার যাবেন, কিন্তু তা আর হলো না। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন।

পদ্মপকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামের মোশারফ হোসেন বলেন, এলাকায় লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ হয়েছে গতকাল থেকে। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। কবে ফিরতে পারবেন, ঠিক নেই। বৃষ্টিতে তাঁদের নাকাল অবস্থা। এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী। রোদে পানি না শুকালে এ দুরবস্থা কাটবে না।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকার ভীম মণ্ডল বলেন, তাঁদের বাড়িতে পানি ঢোকেনি। কিন্তু চারদিকে পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামত না হওয়ায় জোয়ারভাটা চলছে। জোয়ারে যে পরিমাণ জল উঠছে, লোকালয়ে তার অর্ধেক জল ভাটায় নামছে না। ফলে এলাকার মানুষ দ্রুত এ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এই এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে করেন গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, পানি আটকানোর জন্য রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে গ্রামবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কাজ হবে না। বড় জোয়ার এলে আবার ভেঙে যাবে। তিনি দাবি করেন, গাবুরা ইউনিয়নের ৮-১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। অনেকে খোলা আকাশের নিচে। বর্ষাকালের আগে টেকসই বাঁধা না গেলে তাঁদের এলাকা ছাড়তে হবে।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউপির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও শ্যামনগরে পদ্মপুকুর ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান অভিন্ন সুরে বলেন, বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয় না। গত বছর আম্পানে ভেঙে যাওয়া সব বাঁধ মেরামত করতে পারেনি পাউবো। আর ইয়াসের প্রভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ কবে মেরামত হবে, তা কেউ বলতে পারে না। শিগগিরই মানুষের দুর্ভোগ কমার লক্ষণ নেই।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ইয়াসের আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিয়ে রাতদিন কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ইয়াস আঘাত না আনলেও নদ–নদীর জোয়ারের তীব্রতা ছিল আম্পানের চেয়ে বেশি। যে কারণে অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙেছে, আবার বাঁধের ওপর দিয়ে পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।