বৃষ্টিতে জলমগ্ন ঠাকুরগাঁও, খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র

গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এতে ডুবে গেছে নিচু এলাকাসহ পাড়া-মহল্লার সড়ক, ঘর-বাড়ি ও ফসলের জমি। ঠাকুরগাঁওয়ের শহরের জলেশ্বরীতলা থেকে তোলাপ্রথম আলো

গত শুক্রবার ও শনিবার ঠাকুরগাঁওয়ে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিতে জেলা শহরের জলেশ্বরীতলা, গোয়ালপাড়া, এডিসি বস্তি, খালপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি সদর উপজেলার রহিমানপুর, সবদল হাট, সেনপারা, খালিশাকুড়ি ,খড়িবাড়ী, কালিকাগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।

সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে পৌরসভায় ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৫৭০ জন।

শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে আজ রোববার আশ্রয় নেওয়া লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে ডিসি মহল্লার বাসিন্দা নুরজাহান বেগম (৬৫) বলেন, শুক্রবার বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর গোটা মহল্লা পানিতে থই থই করতে থাকে। শনিবার সকালে ঘরে হাঁটুপানি। উপায়ান্তর না দেখে চলে আসেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

নুরজাহান বলেন, ‘শুনেছি, আমার ঘর পানির তোড়ে ভাঙে গেছে। পানি কমেও বাড়ি যায়ে কোথায় উঠব। আপনি কি ঘর করে দেওয়ার জন্য লিস্ট করছেন? ও ভাই আমার নামটাও খাতায় একটু লেখেন।’ পরে এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন নুরজাহান। একই মহল্লার কসিমন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘গতকাল বিকেলে পানির স্রোত দেখে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসিছি। বাড়িতে গরু, ছাগল—সবই পড়ে আছে।’

ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক মানুষ। ঠাকুরগাঁওয়ের শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন
প্রথম আলো

পাশে বসে কথাগুলো শুনছিলেন ওই মহল্লার বাসিন্দা আবদুর রহিম (৪৩)। তিনি বললেন, তিন বছর আগে গোটা এলাকার ঘরবাড়ি পানির ঢলে ভেঙে গিয়েছিল। সে সময় প্রশাসন থেকে মহল্লার উত্তর পাশে একটি বাঁধ করে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এরপর আর তা হয়নি।

সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে দুই সন্তান আর মাকে নিয়ে বসে ছিলেন ফাতেমা বেগম (৪৫)। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফাতেমা বলেন, ‘শনিবার দুপুরে ঢলের পানি ঘরে ঢোকে। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত যা পারছি, ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করছি। এখন এখানে পড়ে আছি। আমরা চলার মতো খাওয়া পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এভাবে আর কত দিন এখানে বসে বসে থাকব?’

কালিকাগাঁও এলাকার কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের এলাকার দেড় শতাধিক চাষির শসা, ঝিঙে, বেগুন, মরিচসহ সবজির খেত পানিতে ডুবে গেছে। পানি না সরলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আফতাব হোসেন বলছেন, জেলায় ৩০০ হেক্টর সবজিখেত জলমগ্ন হয়েছে। বৃষ্টির পানি খেতে জমে থাকলে সবজির বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খেতের জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে জেলার কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর এলকায় ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া অনেকের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের পাশে আমরা আছি।’