বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতন: ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র

আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগে প্রেস ব্রিফিং করে পিবিআই। আজ মঙ্গলবার পিবিআই এর নোয়াখালী কার্যালয়ে
প্রথম আলো

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনসহ ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই অভিযোগপত্রটি জমা দেয়।

এ ছাড়া ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় হওয়ায় মামলায় দেলোয়ার ও তাঁর সহযোগী আবুল কালামের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্রও আজ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুরে পিবিআইয়ের দুই পরিদর্শক মামুনুর রশিদ পাটোয়ারি ও সিরাজুল মোস্তফা নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দুটি জমা দেন। তাঁরা এই দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সময় পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, পিবিআই (নোয়াখালী) পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪ থেকে ১৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক ওই নারীর ঘরে ঢোকে। তারা ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে মারধরের পর নারীকে ‘বিবস্ত্র’ করে ধর্ষণচেষ্টা এবং পুরো ঘটনাটির ভিডিওচিত্র ধারণ করে। ওই নারী পুনরায় অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ৩২ দিন পর গত ৪ অক্টোবর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে পিবিআইয়ের নোয়াখালী কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, নারীকে মারধর, নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় দেলোয়ার হোসেনসহ ১৪ জনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, জামাল উদ্দিন, নুর হোসেন, আবদুর রহিম, মোহাম্মদ আলী, ইস্রাফিল হোসেন, মাঈন উদ্দিন, সামছুদ্দিন ওরফে সুমন, আবদুর রব, মো. আরিফ, নুর হোসেন ওরফে রাসেল, আনোয়ার হোসেন, মো. তারেক ও মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁদের মধ্যে আটজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ১২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়ায় রহমত উল্যাহ ও মাঈন উদ্দিন নামের দুজনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

নির্যাতনের ঘটনার রাতে রহমত উল্যাহর গলার আওয়াজ শুনেছি।
ভুক্তভোগী নারী

গত ৭ অক্টোবর মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্ত করতে ৬৯ দিন সময় লেগেছে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলা তদন্তে সময় লেগেছে ৫৭ দিন।

এদিকে ধর্ষণ মামলার বিষয়ে পিবিআই জানিয়েছে, প্রথম দফায় ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে বসতঘরে ঢুকে ওই নারীকে (৩৭) ধর্ষণ করেন দেলোয়ার। এরপর গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় আবু কালামের সহযোগিতায় বাড়ির পাশের একটি স্থানে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করা হয়। কালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণের ১৪৭ দিন পর দেলোয়ারের মদদে তাঁর বাহিনীর লোকজন ওই নারীকে ‘বিবস্ত্র’ করে মারধর ও ধর্ষণের চেষ্টা করে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনায় জড়িত প্রত্যেক আসামির ফাঁসি চান তিনি। রহমত উল্যাহর নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদনের বিষয়ে ওই নারী বলেন, নির্যাতনের ঘটনার রাতে তিনি রহমত উল্যাহর গলার আওয়াজ শুনেছেন।