বেগুনের বিলুপ্তপ্রায় জাতে সাফল্য পেয়েছে কৃষক

বাজারে অন্য জাতের বেগুনের তুলনায় বিলুপ্তপ্রায় জাতগুলোর বেশি দাম মিলছে। কেজিতে ১২ টাকা করে বেশি।

জৈব পদ্ধতিতে বেগুনের বিলুপ্তপ্রায় জাতগুলোর চাষ করছেন কৃষকেরা। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের খড়িবোনা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দেশের বিভিন্ন স্থানের বিলুপ্তপ্রায় বেগুনের জাত জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে সাফল্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার একদল কৃষক। তাঁরা উপজেলার খড়িবোনা গ্রামের বাসিন্দা। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়া সবজির চাষ করা এসব কৃষক তাঁদের দলের নাম দিয়েছেন ‘কৃষক ঐক্য’।

কৃষক ঐক্যের চাষিদের উৎপাদিত বেগুন এখন স্থানীয় বাজারে অন্য বেগুনের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এসব বেগুনের চারা নিয়ে চাষ করছেন গ্রামের অন্য চাষিরাও। ২০ জন কৃষক নিয়ে গঠিত কৃষক ঐক্যের পরীক্ষামূলক চাষের মধ্যে রয়েছে শিং নাথ সাদা, শিং নাথ কালো, মুক্তাকেশী, বারোমাসি, বোতল, নাসিমা, ঝুরি, চালতে, টব, তাল বেগুনসহ দেশি ১৯টি জাত।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক) নামে একটি পরিবেশবাদী উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় ‘কৃষক নেতৃত্বে বেগুনের জীববৈচিত্র্য গবেষণা’র অংশ হিসেবে এসব বেগুনের চাষ করা হচ্ছে।

খড়িবোনা গ্রামে গিয়ে কৃষক ঐক্যের সদস্য আজিজুল হকের বাড়ির পাশে ৮ শতক জমিতে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ করতে দেখা যায়। প্রতিটি জাতের বেগুনের সামনে নামসংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জাতের ভালো ফলনও হয়েছে।

কৃষক ঐক্যের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবির জানান, ১৯ জাতের মধ্যে বরগুনার টব ও তাল বেগুন, নেত্রকোনার নাসিমা বেগুন, মানিকগঞ্জের মুক্তাকেশী ও বারোমাসি চিকন কালো বেগুন, সাতক্ষীরার ঝুরি বেগুনের বেশ ভালো ফলন হচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া চাষাবাদের খবর এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর এবং স্বাদের দিক দিয়ে উৎকৃষ্ট হওয়ায় বাজারে বেশি দামও পাওয়া যাচ্ছে। কৃষক ঐক্যের বাইরে গ্রামের ৩০ জন চাষিকে তাল বেগুনের ৪০০ চারা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের চাষ করা বেগুনও ধরতে শুরু করেছে। এ বেগুনের একেকটির ওজন ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম।

বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, বেগুনের এ জাতগুলো খরাসহিষ্ণু ও সেচ কম লাগে। এ জন্য বরেন্দ্র অঞ্চল এসব বেগুন চাষের উপযোগী। তাই এখানে প্রচুর পরিমাণ পানি ব্যবহার করে সেচ দিয়ে বোরো ধান চাষ না করে কম পানিতে বেগুন চাষ লাভজনক হবে।

এসব বেগুনের চাষ বৃদ্ধির জন্য বীজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান অমৃত সরকার।