বেতছড়িতে ১০ মাসে ২৭টি বাল্যবিবাহ

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বেতছড়ি এলাকায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৭ কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। বেতছড়িকে বাল্যবিবাহপ্রবণ এলাকা হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত (রেড জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প ও জাতীয় মহিলা সংস্থা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছে।

বাল্যবিবাহ ও কিশোরীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাল্যবিবাহের শিকার ২৭ কিশোরী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করত। বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমাতে ধর্মীয় গুরু, মাতবর, কিশোরী, কিশোরীদের মা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন কুফলগুলো তুলে ধরে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। শপথ বাক্য পড়ানো হয়েছে। ওই এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনের আলাদা নজরদারি রয়েছে।

বেতছড়ি এলাকার মিতু আক্তার বলে, ‘আমার এক সহপাঠীর বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন সে দুই মাস বিদ্যালয়ে এসে আর আসেনি। পরে শুনেছি, তার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর তার একটি সন্তান হয়। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে স্বামীর নির্যাতনের কারণে তার ডিভোর্স হয়ে যায়। বর্তমানে সে তার সন্তানকে বাবার বাড়িতে রেখে চট্টগ্রামে কারখানায় চাকরি করছে। আমরা চাই না আমার সহপাঠীর মতো বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে এমন পরিস্থিতিতে আর কেউ পড়ুক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাল্যবিবাহের প্রতিবাদ করব।’

বেতছড়ি এলাকার মাতবর আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকায় যে বাল্যবিবাহগুলো হয়েছে, সেগুলো গোপনে বা এলাকার বাইরে গিয়ে হয়েছে। নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করে যে বিয়ে হয়, তা বন্ধ করতে পারলে ভালো হবে। তাঁরা এখন থেকে এলাকায় আর বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না।

উপজেলা জাতীয় মহিলা কার্যালয়ের ‘তথ্য আপা’ স্বরূপিণী ত্রিপুরা বলেন, বেতছড়ি এলাকায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাঁরা সচেতনতামূলক কিশোরী ও তাঁদের মায়েদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের উপজেলা ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, তাঁরা বাল্যবিবাহের হার কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, বেতছড়ি এলাকায় তিনি গিয়ে স্থানীয় লোকদের বোঝাচ্ছেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনের সচেতনতা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।