বেতন না পেয়ে ১৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী বিপাকে

শিক্ষকতা করেন রাধেশ্যাম মণ্ডল। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে পরিবার নিয়ে আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। করোনা শুরুর আগে যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে ও টিউশনির টাকা দিয়ে কোনো রকমে চালাতেন সংসার। তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ গত মার্চ থেকে। এতে নয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তিনি। রাধেশ্যাম মণ্ডল বলেন, পরিবার নিয়ে বিপাকে আছেন। খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাধেশ্যাম মণ্ডল। তাঁর মতো মানবেতর জীবন যাপন করছেন মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার কিন্ডারগার্টেনের ১৪ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সানাউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি ও অন্যান্য খাত থেকেই কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। করোনার কারণে মার্চ থেকে তাঁর উপজেলার ৪৫টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিও আদায় হচ্ছে না। এতে শিক্ষক-কর্মচারীরা নয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। অনেকে উপায় না দেখে চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছেন। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছু কিন্ডারগার্টেন।

মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল ৯০টি। এতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন নয় শ। আর মতলব দক্ষিণে ৪৫টি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। দুই উপজেলায় ১৩৫টি কিন্ডারগার্টেনে সাকল্যে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ শতাধিক।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুন নাহার ও মতলব উত্তরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজ বলেন, প্রতিষ্ঠানের আয় থেকেই কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের বেতনও বন্ধ। ধনাঢ্য ব্যক্তি ও সরকারের উচিত বেতনবঞ্চিত এসব শিক্ষক-কর্মচারীর পাশে দাঁড়ানো।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ‘স্ট্যান্ডার্ড ট্যালেন্ট একাডেমি’ নামের একটি কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক আশরাফুল জাহান বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের তহবিলে টাকা নেই। আদায় হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি। এ জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের ঘরভাড়া চালানোও আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন।