বেতন নেই ১৩ মাস ধরে, বিপাকে ১৪০০ শিক্ষক

চাঁদপুর জেলার ম্যাপ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার প্রাথমিক পর্যায়ের ১৪ শতাধিক বেসরকারি শিক্ষক ১৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। করোনার প্রভাবে তাঁদের টিউশনিও বন্ধ। অর্থাভাবে পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বা খাদ্যসহায়তা পাননি। এবার ঈদের কেনাকাটাও করতে পারবেন না তাঁরা।

শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, মতলব উত্তর উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন ৯০টি। শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৯০০। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন ৪৫টি। শিক্ষক-কর্মচারী পাঁচ শতাধিক।

মতলব দক্ষিণের স্ট্যান্ডার্ড ট্যালেন্ট একাডেমী নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘উপজেলা সদরে পরিবার নিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে থাকি। করোনা শুরুর আগে যা বেতন পেতাম, তা দিয়ে এবং টিউশনির টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসারের খরচ জোগাতাম। গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১৩ মাস ধরে বেতন পাইতাছি না। দু-চারটা টিউশনি যা করতাম, করোনা ও লকডাউনের কারণে সেগুলোও বন্ধ।’ তিনি দুঃখ করে বলেন, অন্যের কাছে হাত পাতা তো আর সম্ভব নয়। এখন স্বজনদের কেউ ধারও দিতে চান না। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আর কয়েক দিন পরই ঈদ। গত দুই ঈদের মতো এবারও ঈদের কেনাকাটা করতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে এখন শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষকও। করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে তাঁর প্রতিষ্ঠান ভালোই চলছিল। িউশন ফি ও অন্যান্য খাতের আয় দিয়ে ভালোমতোই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারতেন। এখন সবার মতো তিনিও আছেন বিপাকে।

ফারুক আহম্মেদ বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৩ মাস ধরে বেতনহীন। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষক পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। ঘরভাড়া দিতে না পেরে বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এসব শিক্ষকদের সহায়তায় সরকার বা ব্যক্তি পর্যায়ে কেউই এগিয়ে আসছেন না।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুন নাহার এবং মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানের আয় থেকেই কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা হতো। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁদের বেতন-ভাতাও বন্ধ। এই মানুষ গড়ার কারিগরদের সহায়তায় সবারই এগিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে।