বেনাপোল বন্দর দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকে আছে কয়েক শ পণ্যবোঝাই ট্রাক। বেনাপোল স্থলবন্দর, ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর
প্রথম আলো

অবিলম্বে আগের মতো হ্যান্ডকুলি ও পরিবহন–কুলিদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। পেট্রাপোল বন্দরের জীবন-জীবিকা বাঁচাও নামে একটি সংগঠনের ডাকে শ্রমিকেরা গতকাল রোববার সকাল থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করেন।

আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রমিকদের ওই কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আজও সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দুই বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় শত শত পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে আগের মতো হ্যান্ডকুলি ও পরিবহন–কুলিদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া, সাধারণ ব্যবসায়ী এবং মুদ্রা বিনিময়কারী পরিবহন, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়াডিং এজেন্ট ও ট্রাকচালক সহকারীর ওপর বিএসএফ ও অন্য এজেন্সি কর্তৃক নিরাপত্তার নামে অত্যাচার বন্ধ করা, বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে যাওয়া পরিবহনের ট্রাকগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালি করার ব্যবস্থা করা, আধুনিকতার অজুহাতে বন্দরের শ্রমিকদের কর্মহীন না করা এবং বাণিজ্যিক স্বার্থে আগের মতো পণ্যবাহী চালক ও সহকারীদের পায়ে হেঁটে পেট্রাপোল ও বেনাপোল বন্দরের মধ্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।

ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, প্রতিদিন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাঁচ শতাধিক ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি ও দেড় শতাধিক ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদনে ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যরা বেনাপোল বন্দরে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তাঁদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়।

সূত্র আরও জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বিএসএফের ট্রাক তল্লাশিতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। কিন্তু কোনো সমাধান না আসায় বাধ্য হয়ে বন্দর জীবন-জীবিকা বাঁচাও সংগঠনটির ডাকে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে বন্দরের আমদানি–রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক সংগঠন যৌক্তিক দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে। গত ২১ ডিসেম্বর ভারতীয় সংগঠনটি একই দাবি নিয়ে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। এক দিন পর ২২ ডিসেম্বর সংগঠনটির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা কর্মবিরতি তুলে নেয়। পরে সংগঠনটির দাবি পূরণ না করায় তারা আবারও কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বলে তাঁদের জানিয়েছে ভারতীয় জীবন-জীবিকা বাঁচাও সংগঠন। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রমিকেরা এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আজও সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কুলিরা পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। আজ তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। তাঁরা পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াতের রাস্তাও বন্ধ করেছেন। এ জন্য দুই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম সচল রয়েছে। চলমান সমস্যা সমাধানে যাতে দ্রুত বাণিজ্য সচল হয়, তার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীর যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।