বেনাপোল বন্দরে শ্রমিকদের দুই পক্ষের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, আহত ৬

আজ সকালে বেনাপোল স্থলবন্দরের তিন নম্বর গুদামের সামনে শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধে হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে বন্দর এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এতে উভয় পক্ষের ছয়জন গুরুতর আহত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় স্থলবন্দরের ৩ নম্বর গুদামের সামনের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে বন্দরের দুই শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন শার্শা উপজেলার ছোট আঁচড়া গ্রামের আফসার আলী (৫৮) ও খড়িডাঙ্গা গ্রামের আবুল কালাম (৪০)।

শ্রমিকদের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের মধ্যে দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অহেদুজ্জামান এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর রাশেদ আলী। তাঁদের মধ্যে অহেদুজ্জামান যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ সেখ আফিল উদ্দীন ও রাশেদ আলী বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলমের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। অনেক বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকার মধ্যে বিরোধ চলছে। বন্দরে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিবছর দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়। তবে গত দুই বছর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরের ৩ নম্বর গুদামের সামনে শ্রমিক ইউনিয়নের একটি কার্যালয় রয়েছে। সকালে শ্রমিকেরা ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ রাশেদ আলীর পক্ষের শ্রমিকেরা সেখানে অতর্কিতে হামলা করেন। এ সময় তাঁরা কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। এরপর কার্যালয়ের বাইরে থাকা শ্রমিক সরদার শওকত আলীসহ কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় শ্রমিকেরা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তাঁরা কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাইরে থাকা শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়। রাশেদ আলীর পক্ষের লোকজন পিছু হটলে অহেদুজ্জামানের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে মেয়র আশরাফুল আলমের মালিকানাধীন আইসিবি ব্যাংক ভবনের থাই গ্লাসের জানালা-দরজা ও মার্কেটের দোকানপাটে ভাঙচুর চালান। সংঘর্ষে অহেদুজ্জামানের পক্ষের পাঁচজন ও রাশেদ আলীর পক্ষের একজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অহেদুজ্জামান বলেন, ‘সকালে শ্রমিকেরা কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় মেয়র আশরাফুলের পক্ষের রাশেদের নেতৃত্বে ২৫–৩০ জন মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িতে গিয়ে অতর্কিতে বোমা হামলা চালান। এ সময় শ্রমিকেরা কার্যালয়ে আটকা পড়েন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁরা কার্যালয় থেকে বের হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা মেয়র আশরাফুলের মালিকানাধীন আইসিবি ব্যাংক ভবনের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করেন। আমরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই গ্লাস লাগিয়ে দেব বলে তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি।’

অহেদুজ্জামান আরও বলেন, ‘এমপি আফিল সাহেব আমাদের দেখভাল করেন। এখন শ্রমিকেরা ভালো আছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশেদ আলীর লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর রাশেদ আলীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বন্দরে আধিপত্য বিস্তারের বিরোধে শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। কোনো পক্ষ এখনো মামলা দেয়নি।