বেনাপোলে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা ১৫ দিনের জন্য স্থগিত

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর
ফাইল ছবি

তিন দফা দাবিতে বেনাপোল স্থলবন্দরে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই সিদ্ধান্ত ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

মালিক সমিতির তিন দফা দাবি হলো ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ভালো ক্রেন ও ফর্কলিফটের ব্যবস্থা করা, দক্ষ ক্রেন ও ফর্কলিফটচালক নিয়োগ দেওয়া এবং আমদানি করা পণ্য রাখার জন্য বন্দরে পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বন্দরের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সম্মেলনকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দুইটায় বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার, বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী, বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া, বেনাপোল স্থলবন্দরের দুটি হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ১৫ দিনের মধ্যে নতুন তিনটি ক্রেন ও তিনটি ফর্কলিফট সরবরাহ, ক্রেন ও ফর্কলিফট চালানোর জন্য দক্ষ চালক নিয়োগ, চালকদের সকাল নয়টার মধ্যে কাজে যোগদান, কোনো ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা মেরামত এবং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সমস্যা সম্পূর্ণ ঠিক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা ১৫ দিন স্থগিত করা হয় বৈঠকে।

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৈঠকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে ক্রেন ও ফর্কলিফট সমস্যার সামাধান করে দেবেন বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। এ জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা স্থগিত করেছেন তাঁরা। এ সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ যদি সমস্যার সমাধান না করে, তাহলে পুনরায় পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে।

আজিম উদ্দিন গাজী জানান, ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাকে করে শিল্পপণ্য যেমন মেশিনারিজ, তার, কয়েল, স্টিলের সরঞ্জাম, অ্যাঙ্গেল প্রভৃতি আমদানি করা হয়। বন্দরের শেডের মধ্যে ভারতীয় ট্রাক থেকে এসব পণ্য ক্রেন ও ফর্কলিফট দিয়ে নামানো হয়। পরে একইভাবে ক্রেন ও ফর্কলিফট দিয়ে এসব পণ্য দেশের ট্রাকে ওঠানো হয়। এরপর পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। কম ওজনের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ফর্কলিফট এবং ভারী পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ক্রেন ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, বন্দরের বেশির ভাগ ক্রেন ও ফর্কলিফট পুরোনো। সেগুলো প্রায় অকেজো। কিছু ক্রেন ও ফর্কলিফট ভালো থাকলেও সেগুলো দিয়ে পণ্য খালাস করতে গিয়ে বারবার নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এসব ক্রেন ও ফর্কলিফট চালকেরাও অদক্ষ।

বন্দরের পরিবহনমালিকদের নেতা আজিম উদ্দিন আরও বলেন, বন্দরে পণ্য রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে এ বন্দরে আমদানি করা ভারী পণ্য খালাস করতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যাচ্ছে। দিনে-রাতে ১০-১৫টির বেশি ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য নামানো যাচ্ছে না। পণ্য খালাসে দীর্ঘদিন লাগায় ভারতীয় ট্রাকমালিকেরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য পাঠাতে চাচ্ছেন না। আমদানিকারকেরাও এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সমস্যার সমাধানে তাঁরা বন্দরের পরিচালকের (ট্রাফিক) কাছে দুবার আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টির সমঝোতা হয়েছে। বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন তিনটি ক্রেন ও তিনটি ফর্কলিফট সরবরাহ, ক্রেন ও ফর্কলিফট চালানোর জন্য দক্ষ চালক নিয়োগ, চালকদের সকাল নয়টার মধ্যে কাজে যোগদান, কোনো ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা মেরামত এবং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সমস্যা সম্পূর্ণ ঠিক করে দেওয়া। এ জন্য বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তিনি বলেন, বন্দরে ৬টি ক্রেন ও ১০টি ফর্কলিফট আছে। এর মধ্যে দুটি ক্রেন ও তিনটি ফর্কলিফট প্রায়ই নষ্ট থাকে। সমস্যার সমাধানে নতুন ক্রেন ও ১০টি ফর্কলিফট সরবরাহ করা হবে।