বেনাপোলে শূন্যরেখায় শহীদদের শ্রদ্ধা দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের

যশোরের বেনাপোল সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন
ছবি: প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতির কারণে ছোট পরিসরে হলেও ভাষার টান আর মনের আবেগে এবার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের ভাষাপ্রেমীরা। দুই দেশের মানুষের পক্ষে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান দুই দেশের সাংসদ ও রাজনীতিকেরা। তবে করোনার কারণে এবার শূন্যরেখায় ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা উপলক্ষে কোনো একুশে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকালে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নিজ নিজ ভূখণ্ডে উপস্থিত ছিলেন আয়োজকেরা। এরপর সীমানা পেরিয়ে শূন্যরেখায় পা রাখে দুই দেশের প্রতিনিধিদল। অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণ করে তারা। এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’, এই গান পরিবেশিত হয়। পরে দুই দেশের জনগণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে মিষ্টি পাঠানো হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বাংলাদেশের পক্ষে যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ রায়, বনগাঁ লোকসভার সাবেক সাংসদ মমতা ঠাকুর, তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ জেলা সভাপতি আলো রানী সরকার, বনগাঁ পঞ্চায়েত প্রধান পরিতোষ বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় আগে আমরা বড় করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বনগাঁ পৌরসভা-পঞ্চায়েত সমিতিসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ওই অনুষ্ঠান করা হলেও করোনার কারণে এবার কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে মনের সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক আরও অটুট হয়েছে। আমরা এপার বাংলা ওপার বাংলার সঙ্গে কোনো বিভেদ করি না।’

সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দুই দেশের মানুষকে ভাষার প্রেমে আবদ্ধ করেছে। তাই ২০১১ সাল থেকে দুই দেশের প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে ভাষাশহীদদের স্মরণে শূন্যরেখায় অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এবার অনুষ্ঠান হচ্ছে না। নিজের ভাষার জন্য পৃথিবীর আর কোনো দেশ রক্ত দেয়নি। এ দেশের দামাল ছেলেরা রক্ত দিয়ে আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হলেও ভাষাকে বিভক্ত করা যায়নি।

এদিকে একুশের প্রথম প্রহরে যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ শাহীন চাকলাদার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুজাহারুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া প্রেসক্লাব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অন্যদিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ ক্যাম্পাসে পৃথক আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠান করা হয়।