বেলকুচি আ. লীগ: উপজেলার পর পৌরসভায় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী জয়ী

নবনির্বাচিত মেয়র সাজ্জাদুল হক
সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভরাডুবি চলছেই। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এবার বেলকুচি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী।

মেয়র পদে জয়ী সাজ্জাদুল হক (রেজা) হলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের (সাজেদুল) ছোট ভাই।

একসময় বেলকুচি উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের আধিপত্য ছিল। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ওই সময় স্থানীয় সাংসদ আবদুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ই বেলকুচি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থী। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নুরুল ইসলাম। হেরে যান নৌকার প্রার্থী।

১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আশানুর বিশ্বাসকে হারিয়ে দেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক।

‘বিদ্রোহী’র প্রার্থীর কাছে পরাজয় নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, বেলকুচিতে আওয়ামী লীগে কোন্দল দীর্ঘ সময়ের। এর প্রভাব পড়েছে গত উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় নেই।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি পক্ষ রয়েছে। তাঁর স্ত্রী বর্তমান বেলকুচি পৌরসভার মেয়র এবং গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। তাঁর ছেলে আশিকুর রহমান বিশ্বাস উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

অপর দিকে আবদুল লতিফ বিশ্বাসের জামাতা নুরুল ইসলাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। তাঁর ছোট ভাই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নৌকার  প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। পারিবারিকভাবে দুপক্ষ আত্মীয় হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে কোনো পক্ষই ছাড় দেওয়ার পক্ষে নয়।

বন্যা ও করোনার সময়সহ সব সময় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম এবং আছি। ভবিষ্যতে এভাবেই মানুষের পাশে থাকব।
সাজ্জাদুল হক, নবনির্বাচিত মেয়র

পরাজয়ের জন্য আশানুর বিশ্বাস একটি প্রভাবশালী মহলকে দায়ী করেছেন। গত মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মহলটি নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য চেষ্টা করেছে।

সাজ্জাদুল হক বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটে তিনি প্রথম স্থানে ছিলেন। কিন্তু তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বড় ভাই নুরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং জয়লাভ করেন। পৌরসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের ভোটে তিনি (সাজ্জাদুল) প্রথম হন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবিতে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছেন।

সাজ্জাদুল হক আরও বলেন, ‘বন্যা ও করোনার সময়সহ সব সময় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম এবং আছি। ভবিষ্যতে এভাবেই মানুষের পাশে থাকব।’

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় লজ্জাকর, দুঃখজনক। বেলকুচি পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী কেন হেরে গেলেন, তা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মূল্যায়ন সভার আয়োজন করা হবে।