বৈরী আবহাওয়ায় সব ধরনের নৌযান বন্ধ

বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং মাদারিপুর কাঁঠালবাড়ি নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ। ঘাটে এসে আটকা পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ি নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এই নৌপথে যান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবারও এ পথে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট স্বাভাবিকভাবে চলছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। দমকা বাতাস ও বৃষ্টির কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউ উঠতে থাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এ নৌপথকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকতের আওতায় নিয়ে আসে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌপথের ৮২টি লঞ্চ ও ৪ শতাধিক স্পিডবোট বন্ধ রাখা হয়েছে।

লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পারের কয়েক হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে আছে।২ নম্বর সতর্কতা সংকতের জন্য ৬৫ ফুটের নিচে নৌযান বন্ধ রাখতে হয়।

বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শাহদাত হোসেন প্রথম আলোকে জানান, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় দুই পারের কয়েক হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে আছে। যদিও ২ নম্বর সতর্কতা সংকতের জন্য ৬৫ ফুটের নিচে নৌযান বন্ধ রাখতে হয়। এখানে যে লঞ্চগুলো আছে প্রতিটি ৬৫ ফুটের ওপরে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদীতে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এতে নদীতে ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে। লঞ্চ চলাচল করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে এ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে আবারও নৌযানগুলো চলবে।

ঘাট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তীব্র স্রোত ও নাব্যতা–সংকটে তিন মাস ধরে এ নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাই আগস্ট মাসে মাঝেমধ্যেই রাতে বন্ধ রেখে দিনে ফেরি চালানো হতো। প্রতিদিন মাত্র ৪-৫টি ছোট ফেরি চলাচল করত। সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচ দফায় ১৭ দিন ফেরি বন্ধ ছিল। চলতি মাসের তিন দফায় ১০ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ। ১৫ অক্টোবর সকালে ছোট ৪-৫টি ফেরি চলছিল। সেদিন দুপুরের দিকে আবারও নাব্যতা–সংকট দেখা দেয়। ফলে সেদিন বিকেল থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ফেরি বন্ধ রয়েছে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বৈরী আবহাওয়া অনুকূলে আসলে লঞ্চ ও স্পিবোট চলবে। ফেরি চলাচল সহজেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর থেকে নদী গতিপথ পরিবর্তন করেছে। নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে ডুবোচর জেগেছে। চায়না চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন চ্যানেল খনন হচ্ছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে শীত চলে আসবে। তখন সমস্যা তৈরি হবে কুয়াশার কারণে।

শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন শুক্রবার জানান, ঘাট একেবারেই নীরব। যানবাহন, যাত্রী, পরিবহনশ্রমিক, হকারদের ডাকাডাকি ও কাজ কোনোটাই নেই। অলস সময় পার করতে হচ্ছে। নতুন করেও কোনো গাড়িও আসছে না। যাত্রীরা লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা নদী পার হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা–ও বন্ধ। যারা ঘাটে এসে আটকা পড়েছেন, তাঁরা চরম ভোগান্তিতে আছেন।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়াত আহম্মেদ বলেন, লৌহজং বিকল্প চ্যানেলের পাশ দিয়ে নতুন একটি চ্যানেল খনন চলছে।  চ্যানেলটি পদ্মা সেতুর ৩৮ নম্বর খুটির পাশ দিয়ে হচ্ছে। এটি মাঝিরকান্দি হয়ে যাবে। বিআইডব্লিউটিএর লোকজন খনন শেষ করলে ফেরি চালানো হবে। তবে কবে নাগাদ শুরু হবে, সেটা নিশ্চিত নয়।