বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল, ফিরে গেলেন ১২ হাজার পর্যটক

বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই সফর সংক্ষিপ্ত করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে শহরে সূর্যের দেখা মেলেনি। মেঘলা আকাশ থেকে ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি ঝরছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে শহর থেকে মহেশখালী, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ায় যেতে পারছেন না পর্যটকেরা। টানা বৃষ্টিতে টেকনাফ ও ইনানী সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার সাফারি পার্কসহ অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র, দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়াও পর্যটকদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আবার দুই দিন ধরে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ চলাচল বন্ধ।

বৃষ্টি থামলে পর্যটকেরা হোটেলকক্ষ থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সৈকতে নামছেন। উত্তাল ঢেউয়ে শরীর ভেজাতে না ভেজাতেই আবার নামছে বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে ফিরতে হচ্ছে হোটেলে।

জেলার হোটেল মালিকেরা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হতাশ। গতকাল রোববার রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় অন্তত ১২ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ছেড়েছেন। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অবশিষ্ট ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যটকও বাড়ি ফিরে যেতে পারেন বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের রেইনভিউ আবাসিক হোটেলে ৩৫টি কক্ষ আছে। আজ দুপুরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই হোটেলে ১৬টি কক্ষে অতিথি আছেন। হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকিম খান প্রথম আলোকে জানান, বৈরী পরিবেশে পর্যটকেরা সৈকতে নামতে পারছেন না। ফলে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আজ সকালে অগ্রিম বুকিং করা ১২টি কক্ষ বাতিল হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে জানান, গত শুক্রবারেও সৈকত এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও গেস্টহাউস মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক ছিলেন। কিন্তু এখন মাত্র ১৫ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে পর্যটকের সংখ্যা আরও কমে যাবে।

আবুল কাশেম সিকদার জানান, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের হোটেল-মোটেলগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। তবে এখন কিছু কিছু বুকিং বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পর্যটকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগরে নামছেন
ছবি: প্রথম আলো

ঝুঁকি নিয়ে গোসল

এদিকে সাগর উত্তাল থাকলেও পর্যটকদের ঝুঁকি নিয়ে সাগরের নামতে দেখা গেছে। আজ বেলা দুইটার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাত থেকে আট হাজার পর্যটক সৈকত এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। এর মধ্যে অন্তত দুই হাজার পর্যটককে উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসল করতে দেখা যায়।

বৈরী আবহাওয়ায় সমুদ্রে নামতে নিষেধ করে সুগন্ধা পয়েন্টের দুই কিলোমিটারে ওড়ানো হয়েছে ছয়টি লাল নিশানা। নিশানার পাশে দাঁড়িয়ে সমুদ্রে না নামার জন্য ‘সি সেফ লাইফ গার্ড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কয়েকজন কর্মী প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে এসব উপেক্ষা করেই পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নামছেন।

স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন ঢাকার মগবাজার এলাকার সাজ্জাদুল ইসলাম। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টের সৈকতে নামেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে গোসলের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। দুপুরে বৃষ্টি থামার পর সমুদ্রের পানিতে নেমেছি। তা না–হলে আর সাগরে নামার ইচ্ছাপূরণ হতো না। কারণ, রাতের বাসেই আবার ঢাকায় ফিরে যাব।’

সি সেফ লাইফ গার্ডের ব্যবস্থাপক সাইফুল্লাহ সিফাত জানান, বৃষ্টির কারণে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী সৈকত অনেকটাই ফাঁকা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি থামার পর থেকেই পর্যটকের চাপ বেড়ে গেছে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক পানিতে নেমেছেন। ২৬ জন কর্মী নিয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, বৈরী পরিবেশেও মানুষ উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসল করছেন। পর্যটকদের উত্তাল সাগরে না নামার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সামগ্রিকভাবে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে।