বোনের বাড়ির পিঠা খাওয়ানোয় মা ও ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বোনের বাড়ি থেকে পাঠানো পিঠা খাওয়ানোয় মা ও ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের পুজকরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম (২৫) নামের ওই যুবককে ছুরিসহ আটক করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

নিহত দুজন হলেন সাইফুলের মা নুরজাহান বেগম (৬৫) ও সৎভাবি নুরুন্নাহার (৪৫)। এই ঘটনায় আহত সাইফুলের ভাতিজি আরজু বেগমকে (১৯) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের পুজকরা গ্রামের আবদুল হাইয়ের মেয়ে জেসমিন আক্তারের একাধিক বিয়ে ও বিচ্ছেদ হয়। সর্বশেষ জেসমিন আক্তার একই গ্রামের শাহজাহানকে বিয়ে করেন। তবে জেসমিনের আপন ভাই সাইফুল ইসলাম এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। গত রোববার জেসমিনের বাড়ি থেকে সাইফুলদের বাড়িতে পিঠা পাঠানো হয়। এরপর ওই পিঠা মা নুরজাহান বেগম সাইফুলকে খাওয়ান।

বোনের বাড়ির পিঠা কেন তাঁকে খাওয়ানো হলো—এ নিয়ে সোমবার সকালে মা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে সাইফুলের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাইফুল ছুরি দিয়ে তাঁর মাকে কুপিয়ে জখম করেন। এরপর তাঁর সৎভাই আজিজুল হকের স্ত্রী নুরুন্নাহারের গলায় ও মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় সাইফুল তাঁর ভাতিজি আরজু আক্তারের ৯ মাস বয়সী কন্যাশিশু আফসানা আক্তারকে কোপাতে যান। তখন আরজু আক্তার বাধা দিলে তাঁকেও কোপানো হয়। স্থানীয় লোকজন এসে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পথে রওনা হন। পথেই মারা যানা নুরজাহান ও নুরুন্নাহার। আর আরজুকে নেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ সময় এলাকাবাসী ছুরিসহ সাইফুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান বলেন, সাইফুল তাঁর সৎভাই আজিজুল হকের এক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সাইফুল ক্ষুব্ধ ছিলেন। পিঠা খাওয়ার ঘটনা ছিল একটা অছিলা মাত্র। মূলত ভাতিজিকে উত্ত্যক্ত করার জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড।

আজিজুল হক বলেন, সাইফুল তাঁর এক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন। কেন বোনের বাড়ি থেকে আনা পিঠা তাঁকে খাওয়ানো হলো, তার জন্যই দুজনকে খুন করলেন।

আটক করে থানায় নিয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিহত নুরুন্নাহারের স্বামী আজিজুল হক ৯৯৯ ফোন করে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাইফুলকে আটক করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

দেবীদ্বারে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

এদিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌরসভার সাইলচর এলাকা থেকে ৫০ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেল চারটায় মিরপুর হাইওয়ে পুলিশ ওই লাশ উদ্ধার করে।

মিরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি, তবে তাঁর শরীরের কোমরের নিচের অংশে রক্তজমাট ও শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল, মাথার পেছনের অংশে ফোলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে কোনো পরিবহন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গেছে।

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আনোয়ার বলেন, লাশের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। থানায় লাশ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।