বোরো খেতে চিটা হওয়ার শঙ্কা

বেশি তাপমাত্রায় ধানের ফুলে পরাগায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে, যা ধানের ফুলে পরাগায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। এতে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর—এই ছয় জেলা নিয়ে যশোর কৃষি অঞ্চল। এর আঞ্চলিক কার্যালয় যশোরে। এই ৬ জেলায় চলতি বছর ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ১৮১ হেক্টর জমিতে বেশি ধান আবাদ হয়েছে। কিন্তু চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কারণে যশোর অঞ্চলে ধানে চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ফলন ভালো হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ, ধানগাছে এখন থোড় (শিষ) আসার মুহূর্ত। এ সময়ে ধানের ফুলে পরাগায়ন ঘটার জন্য তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকতে হয়। কিন্তু তাপমাত্রা এখন বেশি। এ কারণে ধানে চিটা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি যশোর সদর উপজেলার উত্তর ললিতাদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ ধানখেতে শিষ এসেছে। কিছু ধানখেতে শিষ কালো বর্ণ ধারণ করেছে।

ধানগাছে এখন থোড় (শিষ) আসার মুহূর্ত। এ সময়ে ফুলে পরাগায়ন ঘটার জন্য তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকতে হয়।
জাহিদুল আমিন, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর অঞ্চল

ওই গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এবার তিনি ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৫ বিঘা জমির ধানগাছে থোড় কালো রং ধারণ করেছে। এতে ধানে চিটা হলে ফলন কমে যাবে। গত বছর যে জমিতে প্রতি বিঘায় ৩৩ মণ ধান পেয়েছেন, এবার ওই জমিতে ২০ মণের বেশি ধান পাবেন কি না, সন্দেহ করছেন তিনি।

একই আশঙ্কা প্রকাশ করে আরেক কৃষক অমল সরকার বলেন, হঠাৎ একটি ঘূর্ণিঝড় আসার কারণে কিছু ধানখেত নষ্ট হয়েছে। এখন আবার তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে ধানে ভালো ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

যশোর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ এপ্রিল থেকে যশোরে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ১ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি ও ১২ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এক মাস বোরো ধানে ফুল থেকে থোড় (শিষ) আসার সময়। এ সময়ে ধানগাছের ফুলে পরাগায়ন ঘটে। পরাগায়নের জন্য উপযুক্ত সময় হলো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এ সময়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির নিচে থাকতে হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে যশোরে তাপমাত্রা চরম হয়ে উঠেছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যশোরে তাপমাত্রা বেশি থাকছে।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ধানের দাম বেশি ছিল। এ কারণে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তিন হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ কম হয়েছে। ওই জমিতে কৃষকেরা বোরো ধানের আবাদ করেছেন। খেত থেকে দ্রুত মসুর তুলে অনেকে ধানের আবাদ করেছেন। কিন্তু ফলন কম হলে কৃষকেরা লোকসানে পড়বেন।

এ পরিস্থিতিতে ধানখেতের পরিচর্যা সম্পর্কে কৃষিবিদ জাহিদুল আমিন বলেন, দুপুরের দিকে সেচ দিয়ে ফসলের খেত পানিতে ভরে রাখতে হবে। এতে তাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পটাশ সার ও ছত্রাকনাশক ছিটাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।