পাটগ্রামে বোরো ছেড়ে ভুট্টায় ঝুঁকছেন অনেক কৃষক

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এবার বোরো আবাদ কমেছে। বোরো ধান চাষের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আগের তিন মৌসুমেও এই উপজেলার কৃষকেরা ধানের চেয়ে ভুট্টার আবাদ বেশি করেছেন। বর্তমানে বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরির মৌসুম হলেও উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলজুড়ে ভুট্টার খেতে নিড়ানির কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য জমি আছে। চলতি মৌসুমে এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২০ সালে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ও ভুট্টার চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এর আগের দুই মৌসুম ২০১৯ সালে ৫ হাজার হেক্টরে বোরো, সাড়ে ১২ হাজারে ভুট্টা এবং ২০১৮ তে ৫ হাজার ৯০০ হেক্টরে বোরো ও ১২ হাজার ৫০ হেক্টরে ভুট্টার চাষ হয়। এ তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, তিন বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে ভুট্টার চাষ। বিপরীতে কমেছে বোরোর চাষ।

উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক আবদুর ওহাব বলেন, বাজারে বর্তমান এক মণ (৪০ কেজি) ধান ৮৯০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভুট্টার বাজারদর ৮২০ টাকা। তবে সেচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বোরোর উৎপাদন খরচ পড়ে মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। বিপরীতে ভুট্টার মণপ্রতি খরচ হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

পৌরসভার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আতাউর জামান বলেন, ভুট্টার বাজারদর আরও ভালো থাকার কারণে চাষের দিকে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বোরো বীজতলা তৈরিতে খরচও বেড়েছে। কৃষকেরা বীজতলার পেছনে বেশি খরচ করতে আগ্রহী নন।

সম্প্রতি উপজেলার কুচলিবাড়ি, জগতবেড়, জোংড়া, বাউরা ও পাটগ্রাম ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের বেশির ভাগ জমিতে কৃষকেরা ভুট্টার বীজ বপনে ব্যস্ত। কিছু অংশে চাষ হয়েছে বোরোসহ অন্য ফসলের।

গত বছর তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন কুচরিবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুর গফুর (৫৫)। তিনি বলেন, গতবার উৎপাদন খরচ না ওঠায় এবার পরিবারের খাওয়ার জন্য দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন। বাকি জমিতে করবেন ভুট্টার চাষ।

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর গফ্ফার বলেন, এই উপজেলার মাটি বেলে-দোআঁশ। তাই বোরো ধান চাষে সেচের পানি বেশি লাগে। এক দিনের বেশি পানিও জমে থাকে না। এ কারণে সেচ খরচ বেশি। অন্যদিকে ভুট্টা চাষে সেচ খরচ কম। উৎপাদনও বেশি। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় প্রকৃত কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বাড়ছে।