ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি: পৌর কর্তৃপক্ষ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে গত রোববার খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল-সমর্থকেরা
ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলামের সহিংসতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরের পক্ষে এ তথ্য জানান সচিব মো. শামসুদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীর দিন বিকেল চারটার দিকে মাদ্রাসার একদল সংঘবদ্ধ ছাত্র বিভিন্ন স্লোগানে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালান। এ সময় জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে স্বাধীনতা দিবসের ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শাবল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ক্ষতবিক্ষত করা হয়। ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের সময় স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত দুই মেয়র প্রার্থীর উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরা পুনরায় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা ও ভাঙচুর চালান। সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন ও পৌর ভবনে গানপাউডার ও পেট্রল ছড়িয়ে আগুন দেওয়া হয়।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চারতলাবিশিষ্ট পৌরসভার মূল ভবন পুড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পৌর ভবনের আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা পুড়ে যাওয়ায় ৫০ লাখ, ১০ লাখ টাকার ২০টি স্টিলের আলমারি, ২০ লাখ টাকার ২৫টি কাঠের আলমারি, ১৬ লাখ টাকার ১৮টি কম্পিউটার, সাড়ে ৩ লাখ টাকার পাঁচটি ল্যাপটপ, ৬ লাখ টাকার চারটি ফটোকপি মেশিন, ১৭ লাখ টাকার ৩৪টি টেবিল, ৭ লাখ টাকার সাতটি সেক্রেটারিয়েট টেবিল, সাড়ে ৩ লাখ টাকার ১১৪টি চেয়ার, ৩০ লাখ টাকার পাঁচটি দুই টন এসি মেশিন, স্বাস্থ্য শাখার ১২ লাখ টাকার ১২টি ডিপ ফ্রিজ, দেড় লাখ টাকার চারটি সাধারণ ফ্রিজ, ৫ কোটি টাকার ভ্যাকসিন, ২০টি ঝুলন্ত পাখা, ভান্ডারে রক্ষিত ৩৫ লাখ টাকার ১০ হাজার এলইডি বাতি, ৩ লাখ টাকার ৫০০টি এলইডি বাতি, ৩০ লাখ টাকার ৩ হাজারটি বাতি শেড, ৫০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার, ৫০ লাখ টাকার শাবল, বেলচা, ঝাড়ু, টুকরি, গামবুট, ব্লিচিং পাউডার ও মশকনিধনের ব্লগার মেশিন পাঁচটি, ৫০ লাখ টাকার পৌর ভবনের ইলেকট্রিফিকেশন ক্ষতি হয়।

এ ছাড়া হেফাজতের আগুনে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বিভিন্ন মডেলের ৮টি গাড়ি, ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ৮টি মোটরসাইকেল, ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার দুটি গার্বেজ ট্রাক, আড়াই কোটি টাকার তিনটি রোড রোলার, ৩৫ লাখ টাকার মশকনিধন গাড়ি, ১৪ লাখ টাকার ২০টি রিকশা, ভান্ডারে রক্ষিত তিন কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে।
পৌরসভার মালিকানাধীন সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনের ছয় কোটি টাকার ভবনের ক্ষতি হয়। ১১ লাখ টাকা মূল্যের ৫৫০টি চেয়ার, ১০ লাখ টাকার ২০ সেট সোফা, ১ কোটি টাকা মূল্যের ২০টি পাঁচ টনের এসি, ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি দুই টনের এসি, ৬ লাখ টাকা মূল্যের ১৫০টি ঝুলন্ত পাখা আগুনে পুড়ে গেছে।

পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, ময়লা-আবর্জনা অপসারণের মতো সক্ষমতা বর্তমানে তাঁদের নেই। ময়লা অপসারণের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ায় নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। অবিলম্বে পৌরভবন সংস্কার করে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর চার বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নামকরণ হয়। এটি ১৫৩ বছর পুরোনো পৌরসভা। এর আয়তন প্রায় সাড়ে ১৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বসবাস করেন।