স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির মামলায় এক দিনেই অভিযোগপত্র

প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দশম শ্রেণির (১৫) এক স্কুলছাত্রীকে মারধর ও যৌন হয়রানি-নিপীড়নের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এক দিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। পুলিশের তথ্যমতে, জেলায় তদন্ত শেষ করে এক দিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিলের ঘটনা এটিই প্রথম। গতকাল রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার ছাদাত অভিযোগপত্রটি আমলে নেন।

মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের খাদুরাইল গ্রামের মাসুক মিয়া (২১) নামের এক বখাটে তরুণ প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে উপজেলার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে মাসুক ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এতে ওই স্কুলছাত্রী সাড়া দেয়নি। বিষয়টি স্কুলছাত্রী তার বাবাকে জানায়। স্কুলছাত্রীর বাবা বখাটে মাসুককে শোধরানোর জন্য বলেন এবং স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবগত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন মাসুক।

গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাতটার দিকে প্রাইভেট পড়তে বাড়ি থেকে বের হয় ওই স্কুলছাত্রী। চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের চান্দুরা ইউনিয়নের ফুলতলী মোড়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে সহপাঠী এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে পড়াশোনার বিষয়ে কথাবার্তা বলার সময় বখাটে মাসুক সেখানে উপস্থিত হন। মাসুক এ সময় ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন এবং ওই স্কুলছাত্রীকে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে স্কুলছাত্রীর পরনের পোশাক ধরে টানাহেঁচড়া করেন মাসুক। এ সময় ওই স্কুলছাত্রী ও তার সহপাঠী খালাতো ভাইয়ের চিৎকারে আশপাশের কজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে স্থানীয় লোকজন বখাটে মাসুককে আটক করেন।

পুলিশের তথ্যমতে, জেলায় তদন্ত শেষ করে এক দিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিলের ঘটনা এটিই প্রথম। অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, বখাটে মাসুক প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে ওই স্কুলছাত্রীকে নানাভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়েছে।

খবর পেয়ে স্কুলছাত্রীর মা ও বাবা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এদিকে ঘটনা জানতে পেরে বিজয়নগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে স্থানীয় লোকজন বখাটে মাসুককে পুলিশে সোপর্দ করেন। ওই দিন দুপুরেই ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেন। মামলায় ওই স্কুলছাত্রী, তার খালাতো ভাইসহ ৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। বিজয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান সঙ্গে সঙ্গেই মামলার তদন্তকাজ শুরু করেন।

মামলা দায়েরের পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) পুলিশ মামলার অভিযোগপত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাতের আদালতে দাখিল করে। আদালত গতকাল অভিযোগপত্রটি আমলে নেন।

জেলায় এক দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিলের ঘটনা এটিই প্রথম। হাতে মামলা কম থাকলে অপরাধ কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে পুলিশ মনোযোগ দিতে পারবে।
মুহাম্মদ আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

অভিযোগপত্র সূত্রে আরও জানা গেছে, বখাটে মাসুক প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে ওই স্কুলছাত্রীকে নানাভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। ওই তরুণ ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলছাত্রী তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়েছে। মাসুক ভালো ছেলে নন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাতটার দিকে মাসুক ওই স্কুলছাত্রীকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারেন। স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। মাসুকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন–২০০০ (সংশোধিত/ ০৩)-এর ১০ ধারার যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান প্রথম আলাকে বলেন, সম্প্রতি পুলিশ মামলার জট নিরসনে কাজ শুরু করেছে। বিজয়নগরের ঘটনায় এক দিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। জেলায় এক দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিলের ঘটনা এটিই প্রথম। তিনি বলেন, হাতে মামলা কম থাকলে অপরাধ কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে পুলিশ মনোযোগ দিতে পারবে।