‘ব্রিজ কোনাত উঠলে ভয় নাগে’

সেতুটির প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে যাওয়ায় পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ। দোলাপাড়ার মাঠ, দোলাপাড়া গ্রাম, তারাগঞ্জ, ২৭ নভেম্বর
প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বাজার থেকে চিলাপাক বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির দূরত্ব তিন কিলোমিটার। এটি সয়ার ইউনিয়নের সঙ্গে তারাগঞ্জ সদরের সংযোগ সড়ক। গত আগস্ট মাসের বন্যায় ওই সড়কের দোলাপাড়া গ্রামের পাশে দোলাপাড়ার মাঠে নির্মিত সেতুটির দেয়াল ভেঙে গেছে। তিন মাসেও সংস্কার না করায় পাঁচটি গ্রামের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি দিয়ে সয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ অংশের পাঁচটি গ্রামের মানুষ, রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল, ট্রাক, ট্রলি, মাইক্রোবাস যাতায়াত করে। ২০ বছর আগে ওই সড়কের দোলাপাড়ার মাঠে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি একটি সেতু নির্মাণ করে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটির দুদিকের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে যায়। ফাটল দেখা দেয় সেতুটির বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু সেতুটি সংস্কার না করায় দোলাপাড়া, বড় দোলাপাড়া, চিলাপাক, নদীরপাড়, বৈদ্যনাথপুর গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা উৎপাদিত ফসল সহজে বাজার জাত করতে পারছে না।


গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির দুই দিকের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে অতি কষ্টে ওই সেতু পারাপার হচ্ছে। ট্রাক, ট্রলি, মাইক্রোবাস, রিকশা-ভ্যান অতিরিক্ত ২ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করছে।

দোলাপাড়া গ্রামের দিনমজুর মজিবর রহমান বলেন, ‘দেখেন না ভাইজান ব্রিজকোনার দুই পাকে মাটি ভাঙ্গি যেয়া ব্রিজের গোড়াত ধোন হইছে। একনা ঠিক না করায় হামরা ধান, পাট, সবজি ট্রাক, ট্রলিতে করে শহরত নিয়া বিক্রি কইরবার পাওছি না। গ্রামোতে কম দামত বেচবার নাগেছে।’
চিলাপাক গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ব্রিজ কোনাত উঠলে ভয় নাগে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলার চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করার পরও একনা ঠিক না করায় হামরা গাড়িত করি যাওয়া আইসা করিবার পাওছি না। পাঁয়ে হাঁটি যাবার নাগোছে।’
নদীরপাড় গ্রামের শিক্ষিত যুবক জয়নাল হোসেন বলেন, ‘সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় কত অশান্তি। কৃষকেরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, যাতায়াতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ‘পাঁচটি গ্রামের ৫ হাজার মানুষ হালকা ও ভারী যানবাহন ছাড়াও মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ভ্যান, ভটভটি নিয়ে এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু ইউপির তহবিলে অর্থ না থাকায় সেতুটি সংস্কার করতে পারছি না। তবে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।’
উপজেলা প্রকৌশলী হায়দার জামান বলেন, বিষয়টি জানা না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দু–এক দিনের মধ্যে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।