ব্লগার অনন্ত হত্যা মামলায় বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ

অনন্ত বিজয় দাশ
সংগৃহীত

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ বুধবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল জজ মো. নুরুল আমিন দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

মামলা পরিচালনায় বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত আলোচিত এ মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখে অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতিসহ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিদের মধ্যে মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল হক সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন। অপর সাক্ষী পূবালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিরাজুল হক চৌধুরী মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন। হত্যার পর অনন্ত বিজয় দাশের বাসার কম্পিউটার, কয়েকটি বই পুলিশ জব্দ করেছিল। জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে সিরাজুল হক চৌধুরী আদালতে এসব বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।