বড় ভাইকে রক্ষায় প্রাণটাই দিয়ে দিল শিশু রিপন, মায়েরও মৃত্যু

পানিতে ডুবে সন্তান রিপন মিয়া ও স্ত্রী রোকেয়া বেগমের মৃত্যুর খবরে জমির উদ্দীনের আহাজারি। আজ রংপুর নগরের জুম্মাপাড়ায়।মঈনুল ইসলাম

জলাবদ্ধ সড়ক দিয়ে বড় ভাই শফিকুল (১২) আর মা রোকেয়া বেগমের (৪৫) সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল আট বছরের শিশু রিপন ইসলাম। হঠাৎ পা পিছলে সড়কের পাশের খালে পড়ে যায় শফিকুল। বড় ভাইয়ের বিপদ দেখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ে রিপন। সন্তানদের রক্ষায় খালে নামেন মা। শেষ পর্যন্ত শফিকুল অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হলেও সলিলসমাধি হয়েছে শিশু রিপন ও তার মায়ের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর নগরের নিউ জুম্মাপাড়ার তসলিমের খামারসংলগ্ন দোলাপাড়া এলাকায় কেডি খালে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রিপনদের বাড়ি নগরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ায়। তার বাবার নাম জমির উদ্দিন।

রংপুর নগরে স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নগরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া থেকে জুম্মাপাড়া যাওয়ার প্রায় চার কিলোমিটারের সড়কটি অনেক নিচু হওয়ায় এখনো হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সড়কের এক পাশে অবস্থিত কেডি খালে এখনো সাত থেকে আট ফুট পানি রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে রিপনদের পরিবার নগরের নিউ জুম্মাপাড়া করিমিয়া মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিল। মা রোকেয়া বেগম বাড়িতে আসা-যাওয়া করলেও বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসাতেই ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শফিকুলকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য ছোট ছেলে রিপনকে নিয়ে ওই মাদ্রাসায় যান রোকেয়া। বাড়ি ফেরার পথে আল হেরা স্কুলের কাছে পা পিছলে বড় ছেলে কেডি খালে পড়ে ডুবে যায়। তাকে বাঁচাতে তার ছোট ভাই রিপন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে সে–ও ডুবে যায়। এ সময় মা রোকেয়া বেগম তাঁর দুই ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য খালের পানিতে ঝাঁপ দেন। বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম (১২) কোনোরকমে উঠতে সক্ষম হলেও রোকেয়া ও রিপন পানিতে তলিয়ে যান।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও স্থানীয় লোকজন মা-ছেলেকে উদ্ধার করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুজনেরই মৃত্যু হয়। বড় ছেলে শফিকুল ইসলামকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরন্নবী জানান, মা-ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।