বড়শি ফেলে মাছের অপেক্ষায়

কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগর দিঘির পাড়ে চলছে মাছ ধরা। গতকাল বিকেলে
প্রথম আলো

প্রতিবছর শরতে শৌখিন মত্স্যশিকারিরা জড়ো হন কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরের পাড়ে। দিঘির ইজারাদারদের কাছ থেকে টিকিট কিনে বড়শি ফেলেন তাঁরা। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দিঘিরপাড় ঘিরে থাকে উৎসুক শত শত মানুষ। প্রতিযোগিতা শেষে অনেকে মাছ ভাগ করে নেন। কেউ কেউ মাছ ধরা শেষে দিঘির পাড়ে তাজা মাছ রান্নাও করেন।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মসাগরের পাড়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। চলবে আজ শনিবার পর্যন্ত। গতকাল বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা নগরের বাদুরতলা, ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম ও রানিরকুঠি অংশে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৯০টি মাচায় বসে আছেন শত শত শিকারি। কেউ দিঘিতে বড়শি ফেলছেন, কেউ মাছের খাবার প্রস্তুত করছেন। হঠাৎ হঠাৎ আওয়াজ উঠছে একেকটি মাচা থেকে। বড় মাছ ধরা পড়েছে বলে হইহুল্লোড় করে উঠছেন শিকারিরা।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৪৫৮ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজ ধর্ম মাণিক্য বর্তমান কুমিল্লা নগরের ২৩ দশমিক ১৮ একর জায়গা দিঘি হিসেবে খনন করেন পানির সংকট মেটাতে। রাজার নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর দিঘি। বর্তমানে ওই দিঘি মাছ চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন কামরুজ্জামান মারুফ গং।

আয়োজকেরা বলেন, দিঘির চারপাশে ৯০টি মাচা তৈরি করা হয়েছে। প্রতি মাচায় অন্তত ৫ জন বসতে পারেন। ১৭ হাজার টাকায় টিকিট কেটে এতে অংশ নিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার শৌখিন মত্স্যশিকারিরা। এই দিঘিতে সর্বনিম্ন ৫০০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পর্যন্ত রুই, কাতল, মৃগেল, ব্ল্যাক কার্প, কালবাউস, কার্প তেলাপিয়া ও বিগ হেড মাছ আছে। গতকালও ১০ কেজি ওজনের একটি ব্ল্যাক কার্প বড়শিতে ধরা পড়ে।

ইজারাদার কামরুজ্জামান বলেন, এটা একটা উৎসবের মতো। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে দূরের জেলা থেকেও মানুষ এসেছে।

সুতানালী দিঘিতে উৎসব

প্রতিনিধি, নালিতাবাড়ী, শেরপুর জানিয়েছে, উপজেলার সুতানালী দিঘিতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের দুদিনের আয়োজন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। ১৭ হাজার টাকায় টিকিট কেটে ৮০ জন মাছ শিকারি এতে অংশ নেন। মধ্যকুড়া সুতানালী দিঘির পাড় মজাপুকুর ভূমিহীন সমবায় সমিতি ৩৩ বছর ধরে এ উৎসবের আয়োজন করে।

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ৬০ একর এলাকাজুড়ে দিঘিটির অবস্থান। ১১৭ জন ভূমিহীন পরিবার এর পাড়ে বসবাস করে। মাছ শিকারের জন্য বসার আসনটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার একরামুল মোল্লা বলেন, একজন শিকারিকে মাছ ধরতে টিকিট ছাড়া আনুষঙ্গিক আরও ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বড় মাছ ধরা পড়েনি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছ পেয়েছেন। তবু মাছ শিকারের নেশায় তাঁরা এখানে আসেন।

সমিতির সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, টিকিটের এই অর্থ খরচ বাদে সমিতির ১১৭ জন সদস্যদের মধ্যে সমহারে বণ্টন করা হয়।