বয়স বাড়িয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড

  • জেলায় বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী ৩১ হাজার ৭৬৩ জন।

  • উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীদের তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) মাছুদা বেগমের জন্মতারিখ ১৯৬৯ সালের ৩ জুন। সেই হিসাবে তাঁর বয়স ৫১ বছর। তিনি ১০ বছর আগে থেকে বয়স্ক ভাতা পান। বিধি অনুযায়ী বয়স না হওয়ায় সম্প্রতি তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মাছুদা বেগমের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর মতো অনেকে বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতার তালিকায় এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম-ঠিকানা সঠিক থাকলেও বয়সের গরমিল পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীদের তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বয়স্ক ভাতা পেতে নারীদের বয়স কমপক্ষে ৬২ ও পুরুষদের ৬৫ বছর হতে হয়। জয়পুরহাটে মোট ৩১ হাজার ৭৬৩ জন বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী রয়েছেন। এর মধ্যে জয়পুরহাট পৌরসভায় ১ হাজার ১৩৮ জন, সদর উপজেলায় ৮ হাজার ১০৭ জন, কালাই উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৬ জন, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৪ হাজার ৩৪৩ জন, আক্কেলপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৮৩৮ জন ও পাঁচবিবি উপজেলায় ৮ হাজার ৪৪১ জন। একজন ভাতাভোগী মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতাভোগীদের নামে বই ইস্যু করা হয়। ভাতাভোগীরা নিজদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাতার টাকা পান।

অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম-ঠিকানা সঠিক থাকলেও বয়সের গরমিল পাওয়া গেছে।

ডেটা এন্ট্রিতে বাদ পড়া বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীদের প্রাথমিক তালিকা নিজ নিজ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়ে দিয়েছে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। এখনো অনলাইনে ডেটা এন্ট্রির কাজ অব্যাহত থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স জালিয়াতি করে কতজন বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীর আওতায় এসেছেন, তার সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাট পৌরসভার ৭৬ জন ও কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নে ৪৫ জন, ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদে ৭৬ জন, আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নে ২৮ জন বয়স্ক ভাতাভোগীর বয়স জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বয়সের গরমিল থাকায় অনেকের ডেটা এন্ট্রির কাজ আটকে রয়েছে। যাঁদের ডেটা এন্ট্রি দেওয়া যায়নি, তাঁদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলার আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার তালিকা পাওয়ার স্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু আমার ইউনিয়নেই নয়, প্রতিটি ইউনিয়নেই আছে। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে আগের পরিষদ করেছে।’

আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমেনা বিবি ১০ বছর আগে বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকাভুক্ত হন। তখন জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর জম্মতারিখ ছিল ৫ অক্টোবর ১৯৪৭। বয়স নিয়ে সমস্যা থাকায় অনলাইনে তাঁর ডেটা এন্ট্রি হয়নি। জানতে চাইলে আমেনা বিবি জানান, তখন কাউন্সিলরের লোকজনের কাছে দুই হাজার টাকা দিয়ে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন। এখন তিনি ভাতার টাকা পাচ্ছেন না।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইমাম হাসিম বলেন, ‘বয়স জালিয়াতি করে অনেকেই বয়স্ক ভাতার আওতায় এসেছেন। আবার অনেক বয়স্ক ভাতাভোগীর খোঁজই মিলছে না। আমরা পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে তালিকা পাঠাচ্ছি। যাঁরা বয়স চুরি করে ভাতাভোগী হয়েছেন, তাঁরা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন।’