বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য বিধবা ফুলমতীর আকুতি

ফুলমতী বেগম
ফুলমতী বেগম

বয়স ৬৪ পেরিয়ে ৬৫ ছুঁই ছুঁই। তারপরও বিধবা ফুলমতী বেগম পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড। স্বামীহারা ফুলমতী এই বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে নানা সংকটে ভুগছেন। বয়সের ভারে রোগ–শোকে তিনি ভারাক্রান্ত। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তাঁর জন্য কষ্টকর।

নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফুলমতী। এই বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। শুধু আশ্বাসই মেলে, কয়েক বছর ঘুরেও কেউ তাঁর জন্য একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২ আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী ফুলমতী বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

এলাকাবাসী জানান, ৩০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ফুলমতীর স্বামী আবদুল খালেক নিহত হন। দিনমজুর স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। পরে ফুলমতী এক ছেলে ও এক মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। দুই বছরের ছেলেটি তখন সবে হাঁটাহাঁটি করতে শিখেছে, তবে এক বছরের মেয়েটিকে বিছানায় রেখেই তাঁকে সারা দিন অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। কাজ করতে গিয়ে সন্তানদের আর যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়নি। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সারা দিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে বিকেলে খাবার নিয়ে ঘরে ফিরতেন তিনি। অযত্নে একসময় ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় তাঁর ছোট মেয়েটি। স্বামীর শোক কাটতে না কাটতে মেয়েকেও হারান তিনি।

এরপর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতে থাকে ফুলমতীর। এখন তাঁর ছেলে আলম মিয়া নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলেটি সংসার চালাতে হিমশিম খেলে বৃদ্ধ বয়সে সংসারে একটু বাড়তি সহযোগিতা করতে ফুলমতী শাক তুলে বিক্রি করতে শুরু করেন। কিন্তু বয়সের ভারে আর তেমন কাজ করতে পারেন না।

বৃদ্ধা ফুলমতী বলেন, ‘গায়ে শক্তি পাই না বইলা মানুষ আর কামে রাখে না। আমি বিভিন্ন মেম্বারের কাছে গেছি। কেউ আমার জন্য কিছু করে নাই। আমি খুবই অসহায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের কাছে শুনছি, ইউনু (ইউএনও) স্যার অসহায় মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা কইরা দেন। যদি আমার জন্য একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন, তবে আমি শান্তি পামু।’

এ বিষয়ে রূপগঞ্জের ইউএনও মমতাজ বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃদ্ধা ফুলমতী যাতে বয়স্ক ভাতা পেতে পারেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’