বয়োজ্যেষ্ঠ না হয়েও বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন তাঁরা

ভোটার তালিকায় উল্লেখ করা জন্মতারিখ অনুযায়ী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুরের ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চক রনচাপ গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী রানী মালাকারের বর্তমান বয়স ৪১ বছর। অথচ তিনি কয়েক বছর আগে থেকেই নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নারীদের বয়স্কভাতা পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ৬২ বছর।

শুধু লক্ষ্মী রানী নন; এই ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ জন নারী–পুরুষ বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ার আগেই বয়স্ক ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে গত ৯ জুন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কয়েকটি ভাতার বই জব্দ করেছেন। এ কাজে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বয়স ৬৫ এবং নারীদের জন্য ৬২ বছর। এলাকাবাসীর দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, হাজীপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চক রনচাপ গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী রানী মালাকার (৪১), আবদুল মনাফ (৫৮), উম্মর আলী (৬২), খয়রুন বেগম (৪৩), শশাঙ্ক মালাকার (৪৭), জ্যোতির্ময় মালাকার (৫৩) ও রাইমন মালাকার (৫৫) বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী। একই ওয়ার্ডের রনচাপ গ্রামের পঙ্কজ রুদ্রপাল (৫৮), সুজন মিয়া (৬২), আবুল মিয়া (৬৩), আসিক মিয়া (৫৬), শৈলেশ দে (৬৪), আবদুল করিম (৬৪), আছকির মিয়া (৫২), মালেকা বেগম (৫০), অনীল রায় (৫৪), পরমেশ চন্দ্র দে (৫৫) ও ভোভেন্দ্র দে (৫৩) দীর্ঘদিন ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।

এ ছাড়া মাতাবপুর গ্রামের শফিক মিয়া (৬০), পনুয়া রবিদাস (৫০) ও সিরাজ মিয়া (৫৩), গাজীপুর গ্রামের আবদুল মুকিত চৌধুরী (৫০), তুকলি গ্রামের মাহমুদ আলী (৬৪), নিরঞ্জন মালাকার (৬৪) ও আবদুর রহিম (৫৪), ইসমাঈলপুর গ্রামের আবদুল বাছিত (৫৩), খালিক মিয়া (৫৮) ও মনসুর মিয়া (৫৫) এবং মনু বাজার এলাকার পানমতি দাস (৫৫) বয়স হওয়ার আগে থেকেই বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।

অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দায়িত্ব দেন জেলা প্রশাসক। ইউএনও বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে। ভাতার উপকারভোগী নির্বাচনে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হলেন সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান। সদস্যসচিব হলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা সমাজকর্মী। ইউপি সদস্যরা কমিটির সদস্য।

সমাজসেবা কর্মকর্তা ইব্রাহিম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সরেজমিনে তদন্তে নির্ধারিত বয়সের কম কয়েকজন ভাতা পাচ্ছেন বলে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। তাঁদের কেউ কেউ ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ভাতা পাচ্ছেন। এ রকম ১৯-২০টি বই জব্দ করে আনা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে। এরপর এ ব্যাপারে ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন।

ইউপি সদস্য শেখ আবদুর রউফ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ভাতার উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁর একক কোনো ক্ষমতা নেই। অতীতে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানের সময়ে এটা ঘটেছে। হাজীপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল বাছিত বলেন, যেসব ভাতাভোগীর বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের তাঁর আগের দুই চেয়ারম্যানের আমলে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত জানা নেই।

ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, এখন অনলাইনে ভাতার তথ্য পূরণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সের কম উল্লেখ করলে অনলাইন সেটা গ্রহণ করবে না। অতীতে কিছু অনিয়ম ঘটতে পারে। সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রতিবেদন পেলে জব্দ করা বইগুলো বাতিলের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।